যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫% শুল্ক চাপলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বহু পোশাক কারখানা: বিজিএমইএ

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের ওপর সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে দেশের তৈরি পোশাক খাত ভয়াবহ সংকটে পড়তে পারে—এমন সতর্কবার্তা দিলেন বিজিএমইএ (BGMEA) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান (Mahmud Hasan Khan)। তার মতে, এই অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর হলে মোট শুল্কহার দাঁড়াবে প্রায় ৫০ শতাংশ, যা দেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য অগ্রহণযোগ্য চাপ তৈরি করবে এবং বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

মাহমুদ হাসান খান বলেন, “আমরা আগেই সাবধান করেছিলাম যে, এই ট্যারিফ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ঝুঁকি হবে। এখনো আমরা আশাবাদী, কারণ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জেনেছি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। আগামী ১ আগস্টের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে।”

তিনি জানান, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। নতুন প্রস্তাবে এর সঙ্গে অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ যোগ হলে মোট শুল্ক দাঁড়াবে প্রায় ৫০ শতাংশ। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৭৩৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। ৫০ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হলে এর মধ্যে প্রায় ৩৫০ কোটি ডলারই যাবে কেবল শুল্ক বাবদ।

এই উচ্চ হারে শুল্ক আদায় বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতা শক্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। “আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এর অর্ধেক শুল্কও দেবে না। তারা বিকল্প হিসেবে ভিয়েতনাম (Vietnam) বা ভারত (India) থেকে তুলনামূলক সস্তায় পণ্য নেবে। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র-ভিয়েতনামের মধ্যে ২০ শতাংশ শুল্কে চুক্তি হয়েছে—যা আমাদের জন্য আরও বড় উদ্বেগের কারণ,” বলেন মাহমুদ হাসান।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের বাজার অংশীদারিত্ব প্রায় ২০ শতাংশ হলেও, ভিয়েতনামের অবস্থান আরও শক্তিশালী। “আমাদের টিকে থাকতে হলে পণ্যের দাম কমাতে হবে, যা উৎপাদন খরচে চাপ বাড়াবে। এর ফলে ছোট ও মাঝারি আকারের অনেক কারখানা টিকে থাকতে পারবে না,”—বলেন বিজিএমইএ সভাপতি।

তিনি যোগ করেন, “আমরা এই প্রস্তাবিত শুল্কের অর্থনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণ করছি। আশা করছি, সরকার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে এবং কূটনৈতিকভাবে সমাধানের উদ্যোগ নেবে।”

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাড়তি শুল্ক আরোপ হলে শুধু পোশাক খাত নয়, সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে বিরূপ প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ যে পোশাকনির্ভর অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে, সেই কাঠামোতেই নড়াচড়া শুরু হয়ে যেতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *