‘জুলাই অভ্যুত্থান’কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংবিধানে স্বীকৃতি সংক্রান্ত বিতর্ক তীব্রতর হচ্ছে। বিএনপি (BNP) চায়, এ ঘোষণাকে মূল সংবিধানে নয়, বরং চতুর্থ তপশিলে অন্তর্ভুক্ত করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হোক। এর মধ্য দিয়ে দলটি ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও সাংবিধানিক কাঠামোর আওতায় আনতে আগ্রহী। তবে এনসিপি (NCP) এই অবস্থান প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, জুলাই ঘোষণাকে সংবিধানের প্রস্তাবনায় জায়গা দিতে হবে—তা হবে ‘রাষ্ট্র পরিচালনার পাথেয়’।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ‘ঐকমত্য কমিশনের’ সংলাপ শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “সংবিধান সাহিত্য নয়, আইন। একাত্তরের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রও মূল সংবিধানে ছিল না, বরং পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সপ্তম তপশিলে যুক্ত হয়েছে—যা নিজেই সাংবিধানিক নয়।”
তিনি বলেন, “বিএনপি চায়, চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে মর্যাদাসম্পন্ন ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হোক। তবে সেটা যেন সংবিধানের চতুর্থ তপশিলে একটি প্যারাগ্রাফের মাধ্যমে হয়।”
বিএনপির মতে, যদি মূল সংবিধানে জুলাই অভ্যুত্থানকে স্থান দেওয়া হয়, তবে পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর ও ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের মতো ঘটনাগুলোকেও জায়গা দিতে হবে। তখন পুরো কাঠামোই প্রশ্নের মুখে পড়বে।
সালাহউদ্দিন বলেন, “রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের আওতায় অন্তর্বর্তী সরকারকে চতুর্থ তপশিলে উল্লেখ করা যেতে পারে।” তিনি জানান, এর আগেও বিএনপি গত ১২ ফেব্রুয়ারি একটি খসড়া সরকারের কাছে জমা দিয়েছিল, তবে নতুন খসড়ায় কিছু আপডেট করা মতামত প্রতিফলিত হয়েছে। সর্বশেষ গত বুধবার রাতে সরকারকে নতুন খসড়ার প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়েছে।
এই প্রক্রিয়ায় সরকার যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় রয়েছে, তা আভাস দিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, “একটি রাজনৈতিক দলের অনুরোধে সরকার ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে মধ্যস্থতায় নেমেছে। কয়েকদিন আগে সরকারের একজন উপদেষ্টা বিএনপি মহাসচিবকে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া দিয়েছেন।”
অন্যদিকে, আখতার হোসেন (Akhtar Hossain), এনসিপির সদস্যসচিব, চতুর্থ তপশিলে স্বীকৃতির ধারণাকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, “জুলাই ঘোষণা সংবিধানের প্রস্তাবনায় থাকতে হবে। এটা শুধুই ঐতিহাসিক দলিল নয়, রাষ্ট্র পরিচালনার নৈতিক ভিত্তি। সংবিধান নতুন হোক বা পুরাতন, সাংবিধানিক স্বীকৃতি চাইলে প্রস্তাবনায় রাখতে হবে—তপশিলে নয়।”
সংবিধান সংস্কারপ্রক্রিয়া নিয়ে এই ভিন্নমতের ফলে রাজনৈতিক ঐকমত্য পৌঁছানো সহজ হবে না বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তবে এবারের সংলাপে সংবিধান সংশোধন বা নতুন সংবিধান প্রণয়ন—এই দুই বিকল্পকে কেন্দ্র করে কথোপকথন যে পরবর্তী ধাপে পৌঁছেছে, তা স্পষ্ট।