নববধূ মানেই ভারী গহনা, রঙিন মেকআপ আর দামি শাড়ি—এই প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন চিকিৎসক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা। কোনো সাজগোজ বা গহনা ছাড়াই, শুধু দাদির সাদা শাড়ি পরে বিয়ের দিন নিজেকে তুলে ধরেছিলেন নিজের মতো করে। ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত তার এমন ভিন্নধর্মী বিয়ের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সাবিনা আহমেদ নামে একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ২০১৭ সালের একটি পুরনো পোস্ট, যেটিতে তাসনিম জারার বিয়ের ছবিটি ছিল সেটি শেয়ার দিয়ে নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে জানান। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
সাবিনা আহমেদের পোস্টটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল:
আট বছর আগে, ফেসবুকের একটি ছবি আমাকে থামিয়ে দিয়েছিল। তাসনিম জারার বিয়ের ছবি—কোনো ভারী মেকআপ নেই, কোনো কৃত্রিম সাজ নেই, শুধু নানির শাড়িতে এক সাধারণ, সাহসী বধূ। সমাজের জাঁকজমকপূর্ণ প্রথা ভেঙে, নিজের মতো করে বিয়ে করার সেই সাহস আমাকে মুগ্ধ করেছিল। তখনই আমি বুক ফুলিয়ে বলেছিলাম, “সমাজের বস্তাপচে নিয়ম ভাঙার সাহস যেই মেয়ের আছে তার ম্যাচ্যুরিটি অন্য লেভেলের!” সেই থেকে এই অসাধারণ মেয়েটি আমার হৃদয়ে একটি বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।
আজ, সেই জারা এসেছে সমাজের বস্তা পচা রাজনীতির মুখোশ খুলে ফেলতে। এসেছে একটি নতুন, সৎ, সাহসী রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে। তার এই পথচলায় আমার অফুরন্ত দোয়া, ভালোবাসা আর শুভকামনা। আর শুধু জারা নয়, তার সঙ্গী হাসনাত আর নাহিদ—তোমরাও এই যুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য। তোমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে রয়েছে আমাদের অগণিত মানুষের আশা আর বিশ্বাস।
সাহস ধরে রাখো, আত্মবিশ্বাসে উজ্জ্বল থাকো। সমাজের এই আগাছা, এই বিষাক্ত রাজনৈতিক জঞ্জাল উপড়ে ফেলো। আমাদের দেশকে, আমাদের সমাজকে উপহার দাও একটি সুন্দর, স্বচ্ছ, ন্যায়নিষ্ঠ রাজনীতি। তোমাদের পাশে রয়েছে অসংখ্য মায়ের দোয়া, অগণিত হৃদয়ের সমর্থন। এগিয়ে যাও, জারা, হাসনাত, নাহিদ—তোমরা আমাদের গর্ব, আমাদের ভরসা!
সাবিনা আহমেদের স্ট্যাটাস
সাবিনা আহমেদের পোস্টে কমেন্ট করে আরশাদ হোসাইন নামে একজন বলেন, তাসনিম জারার মতো যখন বর্তমান প্রজন্মের উচ্চ শিক্ষিত মানুষ রাজনীতিতে আসবেন তখন দেশের রাজনীতি নতুন রূপ লাভ করবে।
শারমিন আক্তার নামের একজন বলেন, সমাজের বস্তা পচা নিয়ম ভাঙ্গার সাহস যে মেয়ের আছে,সে মেয়ের ম্যাচুরিটি অন্যরকম লেভেলের। এর থেকে সত্য আর কিছু নাই। শিক্ষার যোগ্যতা এটাই আদিম কাল থেকে হয়ে আসা কিছু সমাজের কুসংস্কার এবং অযথা নিয়মের শক্ত সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ তাসনিম জারা নিজেই তার বিয়ের ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করে এ বিষয়ে জানিয়েছিলেন। সেসময় তিনি লেখেন, আমাদের সমাজে নববধূ মানেই অনেক টন মেকআপ,ভারি পোশাক ও গহনা। যা অনেকের বা তার পরিবারের সামর্থ্যে থাকে না। অনেক সময় ইচ্ছের বিরুদ্ধেও বিয়ের কনের এটি করতে হয়। এমনকি আমি এই পর্যন্ত যতগুলো বিয়েতে অংশ নিয়েছি বেশিরভাগ সময় মানুষের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল, বউকে সুন্দর লাগছে কি না, সে কি পরিমাণ সোনা পরেছে, তার পোশাকের দাম কত। এই সব প্রশ্ন শুনতে শুনতে নববধূ অনেক চাপ অনুভব করে। সে অনেক টাকা, সময় ও শক্তি খরচ করে সেরা মেকআপ নিয়ে নিজেকে সুন্দর দেখাতে চায়। সবশেষে তাকে আর তার মত দেখা যায় না। কারণ আমাদের সমাজ মনে করে নববধূর গায়ের রং তাদের নিজের বিয়ের জন্য যথেষ্ঠ নয়।
ডা. তাসনিম আরও লেখেন, অনেকে মনে করে গহনা ছাড়া বউয়ের সাজ অসম্পূর্ণ। তার ওপর তার নিজের পরিবারের সক্ষমতার ওপর সে কি পরিমাণ সোনা পড়বে তা নির্ভর করে। সে বাধ্য। কারণ সমাজ তাকে বলবে, তুমি একটি মেয়ে, কেন তোমার বিয়েতে তুমি সোনা পড়নি?