অনিয়ম হলে পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা ফেরত চায় ইসি

নির্বাচনে অনিয়ম হলে পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (RPO) সংশোধনের মাধ্যমে এই ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে বৃহস্পতিবার কমিশনের অষ্টম বৈঠকে প্রস্তাব উঠেছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে ওই বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি, তবে কমিশন জানিয়েছে, পরবর্তী সভায় প্রস্তাবটি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় আসবে।

বর্তমানে ইসির হাতে কেবল কেন্দ্রভিত্তিক ভোট বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে। তবে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা স্মরণ করে কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, “পুরো আসনের নির্বাচন বন্ধের ক্ষমতা এক সময় ছিল, এখন নেই। সেটি ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছি এবং আশা করি, তা ফেরত পাব।”

২০২৩ সালের সংশোধনীর মাধ্যমে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর ৯১(এ) ধারায় পরিবর্তন আনার ফলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন বাতিলের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা খর্ব হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশোধনীতে ‘ইলেকশন’ শব্দের জায়গায় ‘পোলিং’ শব্দ বসিয়ে ইসিকে কেবল ভোটগ্রহণের দিনেই সীমিত করার ফলে, এখন আর তারা পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া বন্ধ করতে পারে না। এই ক্ষমতা ফিরে পেতে চায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন

কী ছিল ৯১(এ) ধারায়?

আরপিও’র ৯১(এ) ধারায় আগে বলা ছিল, নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে ভোট গ্রহণ বা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়, তবে প্রয়োজন অনুযায়ী কেন্দ্র বা সম্পূর্ণ আসনে ভোটগ্রহণসহ নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে। অর্থাৎ ইসি ভোটের আগেই কোনো অনিয়ম বা সহিংসতার আশঙ্কা থাকলে নির্বাচন স্থগিত করতে পারত।

কীভাবে ক্ষমতা খর্ব হলো?

২০২৩ সালের জুলাই মাসে সংসদে পাস হওয়া সংশোধনীতে ‘ইলেকশন’ শব্দের জায়গায় ‘পোলিং’ শব্দ যুক্ত করা হয়। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, ‘ইলেকশন’ মানে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া—তফসিল থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণার পর্যন্ত। আর ‘পোলিং’ কেবল ভোটগ্রহণের দিনের কার্যক্রম। ফলে, ভোটের আগের অনিয়ম বা পরিস্থিতি বিবেচনায় ভোট স্থগিত করার ক্ষমতা ইসির হাতে আর থাকল না।

ইসির প্রস্তাবিত উপধারা কী ছিল?

তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন প্রস্তাব করেছিল, কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ এলে ইসি তদন্ত করে প্রয়োজনে পুরো আসনের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করে নতুন করে ভোটগ্রহণ করতে পারবে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভা এই প্রস্তাবে পরিবর্তন এনে শুধু সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত রাখার ক্ষমতা রাখে। সে ভাবেই সংশোধনী পাস হয়।

ফলে বর্তমানে রিটার্নিং কর্মকর্তা ভোটের ফল ঘোষণা করার পর ইসির হাতে সেই ফল বাতিল করার স্পষ্ট ক্ষমতা নেই। গেজেট প্রকাশের আগেও কমিশনের হস্তক্ষেপের সীমা নিয়ে আইনজীবী ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিভ্রান্তি আছে।

কেন এখন ক্ষমতা ফেরত চায় ইসি?

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে ইসি আবারও তাদের পূর্বের পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্ব ফিরে পেতে চায়। কমিশনের মতে, অনিয়ম, ভীতি ও বলপ্রয়োগের অভিযোগে পুরো নির্বাচনী এলাকা বা আসনের ভোটগ্রহণ স্থগিত বা বাতিলের ক্ষমতা না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে।

কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “আগে আমাদের যেটা ছিল, এখন সেটা নেই। তাই আমরা প্রস্তাব করেছি যাতে পুরো নির্বাচনি আসনের ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা ফেরত পাওয়া যায়।”

পরবর্তী পদক্ষেপ কী?

ইসি জানিয়েছে, এই সংশোধনী নিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হবে। আশা করা হচ্ছে, পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত আসবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *