‘স্বৈরাচারের ভূত এখনো লুকিয়ে আছে প্রশাসনের ভেতরে’ — ভার্চুয়াল সভায় হুঁশিয়ারি তারেক রহমানের

তারেক রহমান (Tarique Rahman) অভিযোগ করেছেন, দেশে এখনো অদৃশ্য শত্রুর ষড়যন্ত্র চলমান, এবং প্রশাসনের ভেতর স্বৈরাচারী মানসিকতা এখনো গোপনে সক্রিয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির এই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি, বরং ধীরে ধীরে আরও স্পষ্ট হচ্ছে কে কার ভূমিকা রাখছে।”

শনিবার (১২ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে ছাত্রদল (Chhatra Dal) আয়োজিত “জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি” উপলক্ষে শহীদ ছাত্রনেতাদের স্মরণ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তিনি।

প্রশ্ন রেখে তারেক বলেন, “সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি কারা এবং কীভাবে বাধাগ্রস্ত করছে? জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার এখনো কেন জোরদার হচ্ছে না?”

তিনি জানান, গত বছরের আন্দোলনে নিহতদের বিচার নিশ্চিত করতে বিএনপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। “আমরা তিন মাস আগেই জুলাই ঘোষণাপত্র ও দলীয় সংস্কার বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। এখন দায়িত্ব বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের,” বলেন তিনি।

স্বজনহারা পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে তারেক বলেন, “আপনারা যে কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তা অনেকেই উপলব্ধি করতে পারেন না। যারা নিজেরা হারিয়েছেন, তারাই বুঝতে পারবেন এ বেদনা। গত ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনে বহু পরিবার আপনাদের মতোই স্বজন হারিয়েছে। আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে, কিন্তু আমরা চেষ্টা করেছি পাশে থাকার।”

তিনি বলেন, “যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল— দেশে গণতান্ত্রিক পরিবর্তন আসবে, মানুষ নিজের মত প্রকাশে স্বাধীন হবে।”

রাজনীতিতে বিএনপির ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, “মানুষ বিশ্বাস করে বিএনপির অভিজ্ঞতা আছে সরকার পরিচালনায়। তাই টকশোগুলোতে দেখা যায়, বিশেষজ্ঞরা বলেন— বিএনপির এই নীতি নেওয়া উচিত, শ্রমিক বা ছাত্রদের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কারণ তারা বিশ্বাস করে, আগামী দিনে বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে।”

মিডিয়ায় ‘বিএনপি সংস্কার মানছে না’— এমন প্রচার নিয়েও উদ্বেগ জানান তিনি। “আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, আলোচনা করতে এসেছি মানতে নয়। যদি সব আগেই মানতে হয়, তাহলে আলোচনার দরকার কী ছিল? কিছু ব্যক্তি ও মিডিয়া একতরফাভাবে বলছে— বিএনপি এটা মানছে না, অন্যরা মানছে। এটা জনগণের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে একটি কৌশল।”

সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা বরাবর বলেছি— অন্যায় যেই করুক তাকে প্রশ্রয় দেবেন না। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের কাজ। এই সরকারের কাছে আমাদের সবার প্রশ্ন, তারা কেন প্রশ্রয় দিচ্ছে, আশ্রয় দিচ্ছে?

তারেক রহমান বলেন, গতকাল স্ক্রিনে যাকে খুন করতে দেখা গেছে, তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। অথচ আমরা দলে প্রমাণ পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা নিয়েছি। তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কেন নীরব?”

তারেক রহমানের পুরো বক্তব্যেই বারবার উঠে আসে— প্রশাসনের অদৃশ্য দিক, বিচারের অনীহা এবং বিএনপিকে ঘিরে মিডিয়ায় তৈরি হওয়া ‘গল্প’ নিয়ে তার গভীর উদ্বেগ। রাজনৈতিক উত্তাপের এ সময়ে এসব বক্তব্য আগামী দিনে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *