এনসিপির কমিটিতে নাম, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া হারুনুর রশিদের: ‘আমি বিএনপিতেই আছি’

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizens’ Party) সম্প্রতি সুনামগঞ্জ জেলা শাখার ৩১ সদস্যবিশিষ্ট সমন্বয় কমিটি ঘোষণা করেছে। তবে এই কমিটিতে যুগ্ম সমন্বয়কারী হিসেবে নাম আসা মো. হারুনুর রশিদ রীতিমতো হতবাক ও ক্ষুব্ধ। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, এই কমিটি বা এতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। তার ভাষায়, ‘আমি বিএনপির রাজনীতিতেই যুক্ত এবং সেখানেই থাকব।’

শনিবার (১২ জুলাই) রাতে ঘোষিত এই কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী করা হয়েছে তেঘরিয়া এলাকার মরমি সাধক হাসন রাজার প্রপৌত্র দেওয়ান সাজাউর রাজা চৌধুরী (সুমন)–কে। এনসিপির কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটি প্রকাশিত হয়।

দেওয়ান সাজাউর রাজা চৌধুরী রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও ২০১৮ সালের সুনামগঞ্জ পৌরসভার উপ-নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে তাকে সরাসরি বিএনপির (BNP) রাজনীতিতে নিয়মিতভাবে দেখা যায়নি।

কমিটিতে পাঁচজন যুগ্ম সমন্বয়কারী রাখা হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রথম নামটি মো. হারুনুর রশিদের। তিনি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং বিএনপির উপজেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি। তবে সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে বহিষ্কৃত হন।

কমিটি ঘোষণার পরপরই হারুনুর রশিদ ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলেন, ‘এনসিপি থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল। কিছু কথা হয়েছে। কিন্তু আমি তাদের সঙ্গে যুক্ত হইনি। এখন হঠাৎ করে কমিটিতে নাম দেখে বিব্রত হয়েছি। আমি বিএনপিতেই আছি এবং থাকব।’

কমিটির অন্য যুগ্ম সমন্বয়কারীদের মধ্যে আছেন ছাত্র–জনতার আন্দোলনে সক্রিয় আতাউর রহমান এবং সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী আবু সালেহ নাসিম, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন।

প্রধান সমন্বয়কারী সাজাউর রাজা চৌধুরী বলেন, ‘আমি আগে সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলাম না। তবে জুলাই মাসের গণ-আন্দোলনে আমার সমর্থন ছিল। এখন আমরা একটি বৈষম্যহীন ও ন্যায়ের ভিত্তিতে গঠিত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করব। মানুষ আর সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য চায় না—তারা চায় শান্তি ও স্বস্তি।’

কমিটিতে আরও যাদের নাম আছে: যুগ্ম সমন্বয়কারী ইসহাক আমিনি, শহিদুল ইসলাম; সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন দেওয়ান তাসাদ্দুক রাজা, আলাল উদ্দিন, করিম মিয়া, শিবনাথ বিশ্বাস, জুলপাশ খান, ফয়সাল আহমদ, শাহানুর আলম, বিকাশ রঞ্জন তালুকদার, মো. রেজাউল করিম, আমিনুল হক, মির্জা আবদুল অদুদ, আলি হোসেন খান, মো. নুরুল ইসলাম, মো. আজাদনুর মিয়া, শ্যামল শান্ত, হাসান আল মাসুম, হাফেজ আরিফুল ইসলাম সরকার, মো. শামিম আহমদ, মো. আবদুর রহমান, হাফিজ আহমদ, সাদিকুর রহমান, রফিক আহমদ, মো. সাইফুল ইসলাম, মকবুল হোসেন ও মো. আলী রাজ আহমদ।

ঘোষণাটি কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে সমন্বয় করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে কিছু ব্যক্তির নাম কমিটিতে থাকা সত্ত্বেও তাদের পূর্বানুমতি না থাকায় শুরুতেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এনসিপির এই কমিটি সুনামগঞ্জে তাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে কতটা শক্ত করতে পারবে, তা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *