জাতীয় নাগরিক পার্টি (NCP) বর্তমানে যে রাজনৈতিক চাপে রয়েছে, তা শুধু বাইরের শক্তির সৃষ্টি নয়—বরং দলের ভেতরের ভুল কৌশল ও উসকানিমূলক অবস্থান এই সংকটকে ডেকে এনেছে বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ।
চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকায় শহীদ পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসে এনসিপি প্রধান নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা এখন অনেক ডিফিকাল্টির মধ্যে আছি। নানা স্থানে আমাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। গোপালগঞ্জে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে।” দলপ্রধানের এই মন্তব্যকে ঘিরেই মোস্তফা ফিরোজ তার প্রতিক্রিয়া জানান।
তিনি বলেন, “এনসিপির বর্তমান রাজনৈতিক নিঃসঙ্গতা নিছক প্রতিপক্ষের চক্রান্ত নয়। এর পেছনে রয়েছে তাদের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কৌশলের দুর্বলতা, উসকানিমূলক বক্তব্য এবং অসঙ্গতিপূর্ণ অবস্থান। ৫ আগস্টের গণজোয়ারে মানুষের যে উৎসাহ দেখা গিয়েছিল, তাতে আজকের এই রাজনৈতিক একঘরে হয়ে পড়ার কারণ খুঁজতে হলে দলের নিজের দিকেই তাকাতে হবে।”
ফিরোজ মনে করেন, গোপালগঞ্জে সংঘটিত ঘটনা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক, তবে রাজনৈতিকভাবে তা ছিল প্রত্যাশিত। তিনি বলেন, “গোপালগঞ্জে এনসিপির সাংগঠনিক প্রস্তুতি ছিল না। বিএনপি বা জামায়াতের পক্ষ থেকেও কোনো উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল না। উপরন্তু, এনসিপির কিছু নেতার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু ও মুজিববাদকে কটাক্ষ করায় স্থানীয় প্রতিক্রিয়া ছিল প্রবল। এতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়েছে।”
তিনি বলেন, “এনসিপির কক্সবাজারের এক নেতা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ–কে ‘গডফাদার’ ও ‘চাঁদাবাজ’ বলে আক্রমণ করেন। এতে বিএনপিকে কার্যত আওয়ামী লীগের জায়গায় বসিয়ে ফেলা হয়েছে, যা খুবই বিপজ্জনক রাজনৈতিক অবস্থান। এই ভুলে দলটি দু’পক্ষেরই বিরোধিতায় পড়েছে।”
সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ এ-ও বলেন, “আজ এনসিপি বলছে, ‘আমরা অনেক ডিফিকাল্টির মধ্যে আছি।’ কিন্তু এই অবস্থার একটি বড় অংশ তারা নিজেরাই তৈরি করেছে। আজ তাদের চট্টগ্রামে কর্মসূচি পালন করতে হচ্ছে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং মিডিয়ার নিরাপত্তার ছায়ায়। এটা রাজনৈতিক দুঃখজনকতা।”
তিনি আরও মনে করিয়ে দেন, যে গণজোয়ার হয়েছিল, তা ছিল একটি আবেগঘন সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া। তাতে বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য দলের মানুষও অংশ নিয়েছিল। কিন্তু আন্দোলন শেষে সবাই নিজ নিজ ঘরে ফিরেছে। একমাত্র এনসিপি-ই দল গড়েছে, কিন্তু সেই ঢেউটাকে তারা ধরে রাখতে পারেনি।