ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহতের প্রসঙ্গে বিতর্কিত মন্তব্য করে সামাজিক মাধ্যমে ঝড় তোলা মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন (Mohammad Iqbal Hossain), ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি), অবশেষে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন।
বুধবার (২৩ জুলাই) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। স্বাক্ষর করেন জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি (Nasimul Ghani)। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বর্তমানে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত ইকবাল হোসাইন গত বছরের ২৮ আগস্ট থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন, যা সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ‘পলায়নের শামিল’ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এই বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে অনুপস্থিতির প্রথম দিন থেকেই, এবং বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি কেবল খোরপোষ ভাতা পাবেন।
তবে এই প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের চেয়েও বেশি আলোচনায় এসেছে এক ভিডিও, যেখানে ছাত্র আন্দোলনের সময়কার সহিংসতা নিয়ে ইকবাল হোসাইনের মন্তব্য জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়।
৪৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান (Asaduzzaman Khan)-এর সামনে একটি মোবাইল ফোনে গুলিবিদ্ধদের ভিডিও দেখাচ্ছেন ইকবাল হোসাইন। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, “গুলি করে করে লাশ নামানো লাগছে স্যার। গুলি করি, মরে একটা, আহত হয় একটা। একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না। এইটা হলো স্যার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের এবং দুশ্চিন্তার বিষয়।”
ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (Chowdhury Abdullah Al-Mamun)-এর কাঁধের পেছন থেকে। সেখানে মন্ত্রীকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা, এবং তার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইকবাল হোসাইন নিজে। গুলির দৃশ্য দেখে মন্ত্রীর চেহারায় কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি—এটিও সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার জন্ম দেয়।
উল্লেখযোগ্য যে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ২০২৪ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। সেই প্রেক্ষাপটে ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওটি আন্দোলনের নির্মম বাস্তবতা ও কর্তাব্যক্তিদের প্রতিক্রিয়াহীনতা তুলে ধরে বহুজনের ক্ষোভ উসকে দেয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, শুধু ইকবাল হোসাইন নন—বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে প্রায় ২৫ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে এরই মধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে ইকবাল হোসাইনের ঘটনা তার মন্তব্য ও প্রকাশ্যে আসা ভিডিওর কারণে বহুগুণ বেশি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে।