জুলাইযোদ্ধাদের সেদিন সন্ত্রাসী বলেছেন তেলবাজ সাংবাদিকরা

আজ ২৪ জুলাই। গত বছরের এই দিনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘এডিটরস গিল্ড, বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে ৩৭ জন ‘তেলবাজ সাংবাদিকের’ সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছিলেন। সভায় শেখ হাসিনাকে ওই সাংবাদিকরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে তাকে গ্রেপ্তারের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, ড. ইউনূসই এই (জুলাই) আন্দোলনের উসকানিদাতা।

মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকরা আরো বলেছিলেন, আন্দোলনকারীরা ছাত্র নয়, সবাই সন্ত্রাসী। নাহিদ, হাসনাত, সারজিসসহ নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতাদের গ্রেপ্তার করতে বলেছিলেন তারা। একই সঙ্গে ‘আন্দোলনে ধ্বংসাত্মক তাণ্ডব চালাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর জঙ্গিরা’ বলেও উল্লেখ করেন তারা।

শেখ হাসিনার প্রতি ওই সাংবাদিকদের পরামর্শ ছিল-ইন্টারনেট বন্ধ করা, কারফিউ জারি রাখা, আলজাজিরা নিষিদ্ধ করা, মাদরাসাগুলোর ওপর কঠোর নজরদারি এবং বিরোধী মিডিয়াগুলোকে শায়েস্তা করা। জবাবে শেখ হাসিনা সেদিন বলেন, ‘এখানে আপনারা ভালো ভালো তথ্য দিয়েছেন। এগুলোকে কনটেন্ট আকারে তৈরি করে ছড়িয়ে দিন।’

ফ্যাসিবাদ সমর্থিত সাংবাদিকরা মতবিনিময় করে শেখ হাসিনার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছিলেন। এ সময় তারা শেখ হাসিনার জন্য যে কোনো কিছু করতে অর্থাৎ ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত বলেও প্রতিশ্রুতি দেন। শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে যায় এমন সংবাদ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন মিডিয়ায় ‘চেপে যাওয়ার’ কথাও বলেন। অন্যদিকে সরকারি বাহিনীর দমন-পীড়ন, হত্যাযজ্ঞ, ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র হামলাসহ প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে সংবাদ পরিবেশনকারী মিডিয়ার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন। কিছু মিডিয়া সরকার পতন আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেন। তারা বলেন, যেসব গণমাধ্যম বিপক্ষে কাজ করেছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে।

মতবিনিময়ে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের শীর্ষ ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন, ছাত্র-জনতার জুলাই আন্দোলনে জামায়াত-বিএনপি ধ্বংসাত্মক তাণ্ডব চালাচ্ছে। তারা বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসেরও কঠোর সমালোচনা করেন সে সময়। বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসই জুলাই আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছেন। তারা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে তাকে গ্রেপ্তারের পরামর্শ দেন শেখ হাসিনাকে।

গত বছরের জুলাই আন্দোলনের মাঝামাঝি সময় ২৪ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়) শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময়ে গণমাধ্যমের শীর্ষস্থানীয় নেতারা যোগ দেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের দমন-পীড়ন ও নির্বিচারে গুলি করে ছাত্রহত্যা, গণগ্রেপ্তার, সেনা মোতায়েন ও কারফিউ জারির ফলে আন্দোলন সাময়িক সময়ের জন্য কিছুটা স্তিমিত হতে দেখে শেখ হাসিনা এ মতবিনিময় করেন।

এ মতবিনিময়ে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকসহ আরো বেশ কজন সাংবাদিককে গত সাড়ে ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের নামে তোষামোদ ও চাটুকারিতা করতে দেখা যেত। কখনো কখনো প্রশ্ন করে শেখ হাসিনাকে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি উসকেও দিতে দেখা গেছে। শেখ হাসিনার সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে (১৪ জুলাই ২০২৪) সাংবাদিক প্রভাষ আমিন ও ফারজানা রূপাসহ বেশ কজন সাংবাদিককে ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক প্রশ্ন করতে দেখা গেছে।

এর দুদিন আগে ২২ জুলাই ব্যবসায়ী নেতারাও শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময় করে তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। কারফিউ জারি ও আন্দোলনের সম্মুখভাগের ছাত্রনেতাদের গ্রেপ্তারের ফলে ‘আন্দোলন দমন করা সম্ভব হয়েছে’Ñ এমনটা ধরে নিয়ে শেখ হাসিনা ‘সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা ও পরবর্তী করণীয়’ নির্ধারণে ওই মতবিনিময় করেছিলেন।

গণহত্যার মামলায় বর্তমানে কারাবন্দি এডিটর গিল্ডের সভাপতি একাত্তর টিভির তৎকালীন এডিটর ইন চিফ মোজাম্মেল বাবুর নেতৃত্বে ৩৭ জন সাংবাদিক ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তাদের মধ্যে ১৭ জন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠানটি তখন রেকর্ড করা হয়।

স্বাগত বক্তব্যে মোজাম্মেল বাবু বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সাধারণ পথচারী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা হতাহতের শিকার হয়েছে। পরিস্থিতি হয়তো আরো কঠোরভাবে মোকাবিলা করা যেত। কিন্তু সে ক্ষেত্রে হতাহতের পরিমাণ বাড়তে পারত। পরিস্থিতি যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে এ জন্য আমরা আপনাদের জাতির পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে পরিণতি যত ব্যাপক হোক না কেন এর মধ্য দিয়ে তাদের মহাপরিকল্পনা হয়তো সফল হয়নি। তারা টার্গেট করে করে উন্নয়নের চিহ্নগুলো ধ্বংস করেছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে গোটা বাংলাদেশ কয়লায় পরিণত হতো।

মোজাম্মেল বাবু বলেন, একটা ক্রিটিক্যাল পরিস্থিতি আমরা আন্দাজ করতে পারি। আমরা মাঠে ছিলাম। কোমলমতি ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মূলত বিএনপি, জামায়াত, শিবিরসহ অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি এবং ১/১১-এর কুশীলবদের ষড়যন্ত্র ফুটেজগুলোতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

নিজেদের মূলধারার গণমাধ্যম দাবি করে মোজাম্মেল বলেন, এটি কঠিন পরীক্ষার সময় ছিল। গুজব, মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে মূলধারার গণমাধ্যমে সত্য, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার খুবই কঠিন। এখানে বাংলাদেশের মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার সম্পাদক ও নিউজম্যানরা আছেন। তাদের পরিমিতিবোধ ও সুসাংবাদিকতার জন্য ধন্যবাদ দিতে চাই।

সেনা মোতায়েনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে একাত্তর টিভির এডিটর ইন চিফ বলেন, যেভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যার কাছে এটাই কাঙ্ক্ষিত ছিল। আপনি যথাসময়ে ১৪ দলের পরামর্শে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছেন। ছাত্রদের ওপর প্রচণ্ড চাপ রয়েছে যেন, আন্দোলন থেকে বের হয়ে যেতে না পারে। তাদের জীবন সংকটাপন্ন করে তুলতে পারে এজন্য তারা আন্দোলন বন্ধের ঘোষণা দিতে পারছে না। আন্দোলনকারীরা সবাই এখন সন্ত্রাসী। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার পতনের। তারেক রহমানও চেষ্টা করছেন কীভাবে জেল থেকে বের হতে পারেন। আরেকজন সুদখোর সাজাপ্রাপ্ত আসামি ড. ইউনূসÑ তিনিও উসকানি দিচ্ছেন।

কিছু কিছু মিডিয়া দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারেনি উল্লেখ করে মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘তারা আসলে গণমাধ্যম না। তারা অ্যাক্টিভিস্ট। রাজনীতির হাতিয়ার। তারা সরকার পতনের আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। তাদের দায়দায়িত্ব আমরা নিতে পারব না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মাধ্যমে তাদের মোকাবিলা করবেন। এই পরিস্থিতিতেও চ্যানেল আইয়ের জিল্লুর আসিফ নজরুলকে এনে ক্রমাগত উসকানি দিয়েছেন। প্রথম আলো রাষ্ট্রদ্রোহীদের উসকানির কলাম ছেপে লাখ লাখ কপি বিনা পয়সায় সরবরাহ করেছে। এটা মোকাবিলা আমাদের ক্ষমতার বাইরে। আমরা সঠিক তথ্যপ্রবাহের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করেছি। হয়তো সেটা যথেষ্ট নয়। ভবিষ্যতে আরো দৃঢ়ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমরা সচেতন থাকব।’

তিনি অভিযোগ করেন, মিথ্যা তথ্য প্রচারের জন্য আলজাজিরার ব্যাপক লিংক ব্যবহার করা হয়েছে। হেফাজতের থেকেই তারা এটা করে আসছে। বিশ্বের অনেক দেশে কিন্তু আলজাজিরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারের উচিত হবে তাদের ডেকে এনে জবাব চাওয়া ও কাতার সরকারের কাছে এ সম্পর্কে প্রতিবাদ পাঠানো।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, ‘এই বৈঠক আমাদের বিশ্বাস ও আস্থাসহ সবকিছু পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আছি, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন লালন করি তাদের দায়িত্ব হচ্ছেÑ পুরো পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে একটি ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করা। উত্তরায় যে ভয়াবহ চিত্র আমরা দেখেছি, জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনি পরীক্ষিত মানুষ, আপনি আমাদের স্বপ্নের সারথি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে আপনি লালন করে রাখছেন। আপনি ডাক দিলে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ এগিয়ে আসবে। আপনার ওপর আমাদের পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। আপনার জন্য আমরা সবকিছু করতে পারি।’

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, ‘রাস্তার পাশে গাড়িগুলোর কঙ্কাল পড়ে রয়েছে। মনে হয়েছে গাজা ও সিরিয়ার কোনো দৃশ্য। পরিকল্পিত হামলা। গানপাউডার ব্যবহার করা হয়েছে। তারা বিটিভি দখল করেছিল। এটা করে ভয়ংকর কিছু করতে পারত। দাড়িওয়ালা লোকজন ছিল বেশি। তাদের সবার হাতে রড ও লাঠি ছিল। বাইরে থেকে লোকজন ঢাকায় আনা হয়েছিল। সবাই ছিল প্রশিক্ষিত। ছাত্ররা এটা করতে পারে না। অনেকের কাছে অবৈধ অস্ত্র আমরা দেখেছি। পুলিশকে পাল্টা গুলি করা হয়। এই অস্ত্রের উৎস কোথায়। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল ও ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এ কাজগুলো করেছে।’

নঈম নিজাম দাবি করেন, মৃত্যুর ঘটনায় খুব কমসংখ্যক ছাত্র মারা গেছে। বেশিরভাগেরই বয়স বেশি ছিল। আমাদের পার্টির ছেলেমেয়েও অনেকে মারা গেছে। তিনি এই নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনার ওপর জোর দেন।

ডিবিসির সিইও ও প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের টার্গেট ছিল রাষ্ট্রকে অকার্যকর প্রমাণ করা। এখনো আমরা নিঃশেষ হয়ে যাইনি। দেশের ভেতরের তথ্য ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা যাতে ছড়িয়ে না যায় সে চেষ্টা আমরা করেছি। কিন্তু বিদেশে এই তথ্য কীভাবে গেলÑ সেটা জানা দরকার। গণমাধ্যম, প্রশাসন ও দল- কে কী ভূমিকা পালন করেছে তার আত্মবিশ্লেষণ দরকার। বিটিভি জ্বলতে দেখলে আমাদের বুকে কোনো সাহসই থাকে না। ছাত্রদের আন্দোলনকে আপনার দল ও সরকারের পক্ষ থেকে কেউ কেউ এক ধরনের সমন্বয় করেছেন। এ কাজটি কতটা সঠিক ছিল খতিয়ে দেখতে হবে।’

মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বারবার শুনছিলাম তারা সংবাদ সম্মেলন করছে। ভালো তথ্য দেবে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে দেখা গেল তারা ‍অন্যরকম তথ্য দিচ্ছে। আমরা ছাত্রদের অনেক তথ্য নিজেদের স্বার্থে, রাষ্ট্রের স্বার্থে প্রচার করিনি। আমরা আপনার ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আপনি আছেন বলেই আজকে আমরা এখানে এসে কথা বলতে পারছি। বাংলাদেশের মানুষ ভরসা পাচ্ছে। সংকট কেটে গেছে এটা মনে করি না। এখনো তাদের পরিকল্পনা শেষ হয়নি। আপনার বক্তব্য বিকৃত করে তারা ভুলভাবে উপস্থাপন করে। আমরা নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে চাই। কিন্তু রাষ্ট্রের পক্ষে না বিপক্ষে গিয়ে? এটা আমরা যারা বিবেচনা করি ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই জীবনকে বাজি রেখে রাষ্ট্রের পক্ষে যারা কাজ করছে তাদের সহযোগিতার বিষয়টি নিশ্চয়ই ভাববেন।’

ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘টানা ১৬ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এই বাংলাদেশের চেহারা এত নৃশংস হবে, এভাবে পুলিশ মেরে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হবে? এ চিত্র বাংলাদেশের হতে পারে না। মনে হচ্ছে কোথায় যেন একটা গলদ ছিল। বিটিভি আক্রান্ত হয়েছে। কোনো রকমে ট্রান্সমিশন রুমে গিয়ে তারা যদি ঘোষণা দিত আমরা বাংলাদেশটা দখল করে ফেলেছি, তাহলে কী পরিস্থিতিটা দাঁড়াত। সুপরিকল্পিতভাবে ছাত্রদের আন্দোলনকে পুঁজি করে এটা করেছে। ঢাকা শহরের কোনো এমপিকে মাঠে নামতে দেখিনি। এত শক্তি থাকতে সশস্ত্র যুদ্ধ কী করে সম্ভব হলো। আমরা অনেক সুযোগ সন্ধানীর চেহারাও দেখেছি। যারা আপনাদের থেকে সুযোগ-‍সুবিধা নিয়ে এখন আবার গর্ত থেকে বেরিয়ে আসছে।’

শ্যামল দত্ত বলেন, ‘ড. ইউনূস যে রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ড করেছে, আমার মনে হয় আজই তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেওয়া উচিত। কারফিউ অব্যাহত রাখতে হবে। ইন্টারনেট আরো কয়েকদিন বন্ধ রাখা দরকার। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত দয়া হরে ইন্টারনেট খুলবেন না। ধ্বংসযজ্ঞ যারা চালিয়েছে তাদের ছাড় দেওয়া যাবে না। এদের খুঁজে খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ছাত্রলীগকে যেভাবে বেঁধে নাকে খত দেওয়া হয়েছে সাবেক একজন ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে তা সহ্য করতে পারি না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আর আজকে ছাত্রলীগের এই অবস্থা!’

যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশ আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। আপনার দল আছে, সরকার আছে। মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা আপনার ওপর আছে। যে কোনো সমস্যায় উপায় আপনি দেবেন। নৈরাজ্য অগ্নিসংযোগ শুধু কোটার জন্যÑ তা কেউ বিশ্বাস করে না। এটা অনেক বড় ষড়যন্ত্রের অংশ। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞে অংশ নিয়েছেÑ তা সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে না। কারা সশস্ত্রভাবে অংশ নিয়েছেÑ তা খতিয়ে দেখা দরকার। দেশের বাইরেও ছাত্রদের সমর্থন করে বাংলাদেশবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। দুর্যোগ ও সংকট থেকে আমরা অনেক কিছু উপলব্ধি করি। মনে করি না ষড়যন্ত্র থেমে গেছে।’

প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি সুন্দর-সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন করেছেন। আপনার উন্নয়নকে টার্গেট করে গত কয়েক দিনের সব ঘটনা ঘটেছে। ইউনূস যে বিবৃতি দিয়েছে, এ জন্য তার বিচার হওয়া উচিত। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হওয়া দরকার। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। কিন্তু টেলিনর বিশ্বের কাছে প্রচার করেছে বাংলাদেশ সরকার এটা বন্ধ করেছে। এটা খতিয়ে দেখতে হবে।’

ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘ইন্টারনেট চালু থাকতে নানা উসকানি দেওয়া হচ্ছিল। তারা যুদ্ধের ডাক দিচ্ছিল। বলা হচ্ছিল আরেকটু হলে সরকার পতন হয়ে যাবে। পশ্চিমা মিডিয়াগুলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা মেশিন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ওই মিডিয়া মালিকদের সঙ্গে কথা বলে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে হবে। বলতে হবে একটি দেশ যখন আক্রান্ত হয় তখন সরকার বসে থাকবে নাকি? সরকারকে তো আত্মরক্ষার্থে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘তাদের অনেক দিন ধরে প্ল্যানটা ছিল। ছাত্রদের ওপর ভর করে সারা বাংলাদেশে আক্রমণ করা হয়েছে। এদের কাউকেই ছাড়া যাবে না। খুঁজে খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে। যেসব গণমাধ্যম বিপক্ষে কাজ করেছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক মিডিয়ার ভূমিকা পর্যবেক্ষণ করার সময় এসেছে। কারণ, তারা এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের যন্ত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’

ঢাকা জার্নালের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘গণমাধ্যম অসহায় অবস্থায় ছিল। আপনি অফিস খুলে দিয়েছেন। এতে মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস ফিরে এসেছে। তারা অফিস করতে চাচ্ছে। কাজ করতে চাচ্ছে। সারা দেশকে কর্মমুখর করতে হবে। ইন্টারনেট বন্ধ বিষয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি। মাথাব্যথা হলে মাথার ব্যবস্থা সঠিক পদক্ষেপ নয়। ইন্টারনেট থাকতে হবে। ইন্টারনেট সচল করতে হবে।’

নাগরিক টিভির হেড অব নিউজ ও বিএফইউজে আওয়ামী সমর্থিত অংশের মহাসচিব দীপ আজাদ বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে কারা আর বিপক্ষে কারা, তা যাচাই করার জন্য গত কয়েকদিন কার অবস্থান কোথায় ছিল, তা খতিয়ে দেখতে হবে।

বাংলাদেশ জার্নালের সম্পাদক শাহজাহান সরদার বলেন, ধ্বংসযজ্ঞ ও বীভৎস ঘটনাগুলো বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে হবে। বিদেশি মিডিয়াগুলোকে এনে তাদের সামনে তথ্য তুলে ধরতে হবে। মাদরাসাগুলোর সিলেবাসে কী পড়ানো হয় তা সরকারের নজরে থাকতে হবে।

ডিবিসি নিউজের সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে টেলিভিশন ও প্রিন্ট মিডিয়ার মধ্যে মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়েছে। আমাদের এত লোক এখন টকশোতে যাওয়ার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। তারা এতদিন অ্যাকটিভ ছিলেন, কিন্তু এ তিনদিন আসেননি। এটা বিবেচনায় নেওয়া দরকার।’

গোয়েন্দাদের তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত প্রিভেলেজ আছে উল্লেখ করে পিন্টু বলেন, ‘কিছু কিছু তথ্য আমি আপনাকে দিয়েছি। গোয়েন্দাদের রিপোর্ট আমি নিজেও দেখেছি। কোন পরিস্থিতি হলে পুলিশের একজন ডেপুটি কমিশনার ৬০ জন ফোর্স নিয়ে পালিয়ে যান। লড়াই করার জন্য ৬০ জন ফোর্স অনেক শক্তিশালী। একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, রাজধানীতে কোনো পিঁপড়া প্রবেশ করতে পারবে না, অথচ হাতি প্রবেশ করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।’

নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য আত্মসমালোচনা করার পরামর্শ দিয়ে পিন্টু বলেন, ‘গত ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের অফিস রক্ষায় কেন সেনাবাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজন পড়ল। ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও আওয়ামী লীগ অফিস আর্মি-পুলিশ দিয়ে পাহারা দিয়ে রাখতে হবেÑআজকে এ পরিস্থিতি কেন হলো? ছাত্রলীগের হয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলন আমরা করেছি। এগুলো দেখলে কষ্ট পাই।’

ইনডিপেনডেন্ট টিভির হেড অব নিউজ আশিস সৈকত বলেন, ‘আমরা এক ধরনের অসহায় অবস্থার মধ্যে ছিলাম। যারা আমাদের রাস্তায় আটকিয়েছে, তাদের চোখগুলো মনে হয়েছিল বাঙালির নয়। লাল চোখ। মুখে দাঁড়ি। সব সময় বিএনপির কর্মসূচির সময় রাস্তায় আওয়ামী লীগকে দেখি। কিন্তু এবার দেখলাম না। আমার কাছে মনে হয়েছে এ দেশে আমরা থাকতে পারব কি না? আমাদের যেভাবে অপদস্থ করা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে এ দেশ আমাদের কি না? এরা যে দলমতের হোন না কেন, এদের বিচার করে কবর দেওয়া না গেলে আবারও একই ঘটনা ঘটাবে।’

বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল বলেন, ‘ঘরের শত্রু বিভীষণদের চেনার সময় হয়েছে। নির্বাচনের আগে ও পরে কয়জন জঙ্গি মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তারা কোন ফাঁকে কীভাবে বেরিয়ে এসেছে। তাদের নজরদারিতে রাখা দরকার। ঢাকায় ঢোকা ও বের হওয়ার প্রতিটি পয়েন্ট মাদরাসায় ভরপুর। যেদিকে তাকাবেন মাদরাসা আর মাদরাসা। এত মাদরাসা কীভাবে হয়। অনুমতি দেয় কারা? এগুলো যদি না করা হয় ভবিষ্যতে কিন্তু আরো বড় হতে পারে এসব পয়েন্ট।’

একাত্তর টিভির হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ বলেন, ‘বনশ্রীর ভেতরে রাতের বেলা কালো পোশাক পরা জঙ্গি অ্যাটিটিউডে ছিল ১৫-২০ জন, তাদের হাতে প্রকাশ্য অস্ত্র ছিল। তারা মসজিদে ঢুকে প্রথমে একজন ইমামকে ছুরি দিয়ে ধরে বলেছে তুমি মাইকে ঘোষণা দাও রক্তগঙ্গা বয়ে গেছে। বাসা থেকে বের হয়ে আসো। প্রথম ইমাম রাজি হননি। দ্বিতীয় ইমাম রাজি হয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে ঘোষণা দেওয়ার পর মানুষ কাতারে কাতারে বের হয়ে আসে। এরপর নানারকম ঘটনা ঘটেছে।’

অসম্ভব সমন্বয়ের মাধ্যমে এ কাজটি হয়েছে উল্লেখ করে শাকিল বলেন, তারা জেনেবুঝে প্রতিটি কাজ করেছে। এর পেছনে কেবল দেশি নয়, ট্রেইনড বিদেশি চক্রান্তকারীরা যুক্ত ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের মানুষের মত বিষিয়ে তোলা হয়েছে। কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড না হওয়া পর্যন্ত ফেসবুক ও ইউটিউব বন্ধ রাখা দরকার।

এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের সম্পাদক মোল্লাহ এম আমজাদ হোসেন বলেন, ‘যাত্রাবাড়ীর মাদরাসায় কী হয়, তা আমার দেখার সুযোগ হয়েছে। এবার প্রথমবারের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হিযবুত তাহরীর এখনো স্ট্রং। বিটিভিতে দুই দফায় আক্রমণ হলো, তাহলে এটা কীসের কেপিআই। ছাত্রলীগ আজ কতটা সংগঠিত। এরা সত্যিকারার্থে মেধাবীদের আকর্ষণ করতে পারছে কি না? দেশকে সুরক্ষিত করতে দলকে সুরক্ষিত করা খুবই জরুরি।’

কিংস নিউজের হেড অব নিউজ শেখ নাজমুল হক সৈকত বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ সফলভাবে মোকাবিলার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এসএমএস করে আন্দোলনের নামতে বলা হয়েছিল। এজন্য তাদের বেশি মার্কস দেওয়ার লোভ দেখানো হয়। আর না নামলে মার্কস কমিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। যারা হামলা করেছে, তারা ইমার্জেন্সির কারণে পালিয়ে যেতে পারেনি। তারা ঘাপটি মেরে আছে। ইমার্জেন্সি রেখে অপারেশন করা গেলে এ জঙ্গিদের ধরা সম্ভব হবে।’

আরটিভির মামুনুর রহমান খান বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ রিভার্স হয়ে গেছে। এটা আমাদের বুঝতে হবে কী করে তারা এ রকম একটা জায়গায় গেল যে, সে নিজেকে রাজাকার বলছে। যে শব্দটাকে আমরা নিকৃষ্টতম গালি মনে করি, সেই জায়গায় একট বড় অংশ গেল কী করেÑতা বের করা উচিত। মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে গিয়ে বলা হচ্ছে, এখানে নাকি রাজাকার ছিল তারা কই। যারা দেশের স্বাধীনতা এবং মৌলবাদকে… ই করে তাদের রাজনৈতিক প্রশ্রয় দেবেন না।’

সাংবাদিক নামের তেলবাজদের ভক্তিতে গদগদ এসব গল্প শুনে সভায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা যে কাহিনিগুলো বললেন, প্রত্যেকের জানা ঘটনাগুলো একত্রে করা দরকার। সবগুলোকে এক জায়গায় করে আপনারা একটি ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে দিতে পারেন। এর ব্যাপক প্রচার করাও দরকার। জনগণকে সাবধান করা দরকার। যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেটা বারবার দেখাতে হবে। আপনাদের যার যার সুযোগ আছে বিদেশি গণমাধ্যমগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।’ হাসিনা আরো বলেন, ‘আমি যতদিন ক্ষমতায় আছি কোনো মানুষ যদি কষ্টে থাকে, আমার যেটুকু আছে সবটুকু দিয়ে দেব। আমি তো নিজের জন্য কিছু করিনি। আমি গরিব মানুষকে ঘর করে দিয়েছি। আমার জন্য তো করতে চাইনি। ঢাকা শহরে বাড়ি বানাব, গাড়ি বানাবÑএসব চিন্তাও করি না।’

সেদিনের সেই তেলবাজ সাংবাদিকরা কে কোথায়

শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ওই সাংবাদিকদের মধ্যে মোজাম্মেল বাবু এবং প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত ৫ আগস্টের পর স্থলপথে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় আটক হন। একাত্তর টিভির হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ ও তার স্ত্রী একাত্তর টিভির প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রূপা বিদেশে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম ও তার স্ত্রী জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন। বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল ৫ আগস্টের পর গোপানে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন বলে জানা গেছে। তবে তিনি এখনো বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদকের পদে রয়েছেন।

নাগরিক টিভির হেড অব নিউজ ও বিএফইউজে মহাসচিব দীপ আজাদ, ডিবিসির সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু, ইনডিপেনডেন্ট টিভির হেড অব নিউজ আশিস সৈকত, কিংস নিউজের হেড অব নিউজ নাজমুল হক সৈকত ও আরটিভির মামুনুর রহমান খান বর্তমানে তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নেই। এদের কেউ কেউ ৫ আগস্টের পর স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়েছেন। কেউ কেউ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পদত্যাগ করেছেন।

বাংলাদেশ জার্নালের শাহজাহান সরদার, এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন ও ঢাকা জার্নালের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা এখনো স্বপদে বহাল। সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্যও ছিলেন।

আওয়ামী সমর্থিত সংগঠনে পরিণত হয় এডিটরস গিল্ড

সংবাদ প্রকাশনা ও পরিবেশনার সঙ্গে যুক্ত সব ধরনের মাধ্যমের সম্পাদকীয় নেতাদের নিয়ে ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর এডিটরস গিল্ড, বাংলাদেশ নামে নতুন একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী। তিনি ছিলেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে গঠিত সংগঠনটির প্রথম পূর্ণাঙ্গ কমিটির সভাপতিও হন তিনি।

পরবর্তী সময়ে একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবুসহ কয়েকজন মিলে তাকে কোণঠাসা করে সংগঠনটির নেতৃত্ব কবজা করে নেন। ২০২১ সালের মার্চে সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব নেন মোজাম্মেল বাবু। এরপর থেকে তিনি এ পদে রয়েছেন। তৌফিক ইমরোজ খালিদী পরবর্তী সময়ে এ সংগঠন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন।

সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষা এবং সাংবাদিকতা পেশার উৎকর্ষ বাড়ানোর লক্ষ্যে এ সংগঠনটির যাত্রা শুরু হলেও পরে তা আওয়ামী সমর্থিত সংগঠনে পরিণত হয়।

এ সংগঠনের ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে একাত্তর টিভিতে টকশোর নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বয়ান তুলে ধরতে দেখা গেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তিনদিন আগে এডিটরস গিল্ডের প্রতিনিধিরা শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে এসেছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ও তারা শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছিল।

ওই বিবৃতিতে ছাত্রদের আন্দোলনকে ‘দেশে অস্থিরতার পরিবেশ সৃষ্টিতে তৎপর হয়েছে’ বলে দাবি করা হয়। বিবৃতিতে শেখ হাসিনার বক্তব্যের পক্ষে সাফাইও গাওয়া হয়। জুলাই আন্দোলনের সময় সর্বশেষ ২৪ জুলাই এডিটর গিল্ডের প্রতিনিধিরা শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এরপর থেকে এডিটর গিল্ডকে আর সক্রিয় দেখা যায়নি।

এর আগে ২২ জুলাই অনুষ্ঠিত এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ, ডিসিসিআই, এমসিসিআই, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক, দোকান মালিক সমিতিসহ দেশের সহস্রাধিক শীর্ষ ব্যবসায়ী ও বাণিজ্যিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা।

তাদের মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম, ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার (বর্তমানে কারাবন্দি), বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমদ আকবর সোবহান, প্রাণ গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, বিজিএমইএ সভাপতি এসএম মান্নান কচি (পলাতক), এমসিসিআইয়ের সহসভাপতি নাসিম মঞ্জুর, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিনসহ অন্য ব্যবসায়ী নেতারা বক্তব্য দেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *