মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি:”আমাদের সদস্যরা তাদের ইউনিফর্ম খুলে মরদেহের ওপর ঢেকে দেন” – লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাহসিন

উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ (Uttara Milestone School and College)-এর দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার ঘটনায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়েছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাহসিন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তুলে ধরেন কীভাবে মুহূর্তের ব্যবধানে একটি শান্ত দুপুর রূপ নেয় ভয়ংকর মৃত্যুকূপে।

২১ জুলাই দুপুর ১টা ১২ মিনিট। সেনা ক্যাম্পের সদস্যরা তখন যার যার দায়িত্বে ব্যস্ত। ঠিক সেই মুহূর্তে, বিকট এক শব্দ—পরবর্তীতে জানা যায়, একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে দিয়াবাড়ির ওই স্কুল ক্যাম্পাসে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাহসিন বলেন, “আমরা ক্যাম্পেই ছিলাম। মাত্র ১০০–১৫০ মিটার দূরে। খবর পেয়ে আমরা ছুটে যাই, কিন্তু যা দেখলাম, তা ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন। ছোট ছোট বাচ্চারা যাদের গায়ে স্কুল ইউনিফর্ম, তাদের শরীরের চামড়া ঝলসে গেছে। ইউনিফর্মও আর চিনে নেওয়া যাচ্ছিল না। একজন মানুষ হিসেবে, একজন বাবা হিসেবে, এই দৃশ্য সহ্য করা অসম্ভব।”

তিনি জানান, সেনাবাহিনীর সদস্যরা তিনটি বিষয়ে দ্রুত অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেন—প্রথমত, আহত ও নিহতদের উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা; দ্বিতীয়ত, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা; এবং তৃতীয়ত, বিমানটিতে থাকা দাহ্য পদার্থ থেকে যাতে আরও কোনো বিস্ফোরণ না ঘটে, তা নিশ্চিত করা।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাহসিন বলেন, “রাস্তার মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল মরদেহ। অনেকের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন। আমাদের সদস্যরা তাদের ইউনিফর্ম খুলে মরদেহের ওপর ঢেকে দেন, যেন শেষ বিদায়টা কিছুটা হলেও সম্মানের হয়। সেই সময় শুধু সৈনিক নয়, মানুষ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি। আমাদের মনুষ্যত্বই বড় হয়ে উঠেছিল।”

উদ্ধারকাজে যুক্ত হন স্থানীয় পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এবং আশেপাশের লোকজন। সহায়তার জন্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাহসিন সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

তবে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া অনেক সেনাসদস্য ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট ও মানসিক চাপের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাদেরকে ভর্তি করা হয় সিএমএইচ ঢাকায়।

উদ্ধার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন হয় ২১ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত আটটার মধ্যে। এরপর সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং বিমানটির বেশিরভাগ ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করে নিয়ে যায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী (Bangladesh Air Force)। পুলিশ ঘটনাস্থল কর্ডন করে রাখে এবং পরদিনও কিছু ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়।

এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা একটি দগদগে ক্ষতের মতো করে রয়ে গেছে উত্তরার প্রাণকেন্দ্রে। যে শিশুদের আর ফেরা হবে না, তাদের জন্য দেশবাসীকে রেখে গেছে অশ্রু, শোক আর অপ্রতিরোধ্য বেদনার ইতিহাস।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *