চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্রনেতাদের আদালত চত্বরে বিক্ষুব্ধ জনতার কিল-ঘুষি

রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ১ কোটি টাকার চাঁদা দাবির অভিযোগে গ্রেপ্তার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের এক নেতাকে আদালত চত্বরে কিল-ঘুষি ও লাথি মেরেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।

চাঁদাবাজির মামলায় আজ রোববার রিমান্ড শুনানির আগে ও পরে এ ঘটনা ঘটে।

এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক মোখলেসুর রহমান আসামিদের আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালত প্রত্যেকের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আসামিরা হলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ।

আজ বিকেল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে আসামিদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাদের দেখে বিক্ষুব্ধ জনতা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এরপর আসামিদের আদালত ভবনের চার তলায় নেওয়ার সময় সিঁড়িতে পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যেই বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের কিল-ঘুষি ও লাথি মারে।

আদালতের কাঠগড়ায় ওঠানোর পর তাদের পক্ষে এক আইনজীবী জিজ্ঞাসা করেন, ‘কেন চাঁদা নিতে গিয়েছো? সত্যি কি তোমরা চাঁদা চাইতে গিয়েছিলে?’

এ সময় আসামিরা জানান, তারা চাঁদা নিতে যাননি। ওই বাসায় যাওয়ার আগে তারা পুলিশকে ফোন করে জানিয়েছিলেন। এরপর তারা গিয়ে ওই বাসার নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু পুলিশ এসে কোনো কথা না বলে উলটো তাদেরই ধরে নিয়ে যায়।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন বলেন, এরা কোনো সাধারণ আসামি না। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এ চক্র ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী এলাকায় আওয়ামী লীগের বাসা খুঁজে খুঁজে লিস্ট তৈরি করে চাঁদাবাজি করে। চাঁদাবাজি করে তারা ফেসবুকেও উল্লাস করেন। তারা তারেক রহমানের নামেও বিষোদগার করেন। তারা যে বাসায় হানা দিয়েছেন, সেটা আওয়ামী লীগের নেত্রীর বাসা। তিনি পালিয়ে আছেন। এরপরও তার বাসায় গিয়ে চাদা দাবি করেছেন।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পলায়নের পর এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) নামে তারা চাঁদাবাজি করেন। শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার চেষ্টা করছেন তারা। তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। এদের বয়স কত হয়েছে? এত অল্প বয়সে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার দরকার আছে? রিমান্ডে নেওয়া হলে কত কোটি টাকার মালিক, তা পাওয়া যাবে।

এই আইনজীবী আরও বলেন, জুলাই আন্দোলনে যারা রক্ত দিয়েছেন, আহত হয়েছেন, তাদের রক্তের সঙ্গে তারা বেঈমানি করেছেন। তাদের এ ঘটনার সঙ্গে কারা কারা জড়িত, আর কোথায় কোথায় তারা চাঁদাবাজি করেছেন, সেটা জানা দরকার। সেজন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চাই৷

এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী আক্তার হোসেন ভূইয়া রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানিতে বলেন, আমি বেশি কিছু বলব না। শুধু একটা কথাই জানাতে চাই, উনারা ওখানে যাওয়ার আগে থানায় ফোন দিয়েছিলেন। এ বিষয়টা দেখার অনুরোধ করছি।

এরপর বাদীপক্ষের একাধিক আইনজীবী সর্বোচ্চ রিমান্ডের দাবি জানান। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

বিকাল ৪টা ৩৭ মিনিটে এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়ার সময় পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই বিক্ষুব্ধ জনতা আসামিদের আবারও কিল-ঘুষি, লাথি মারে।

উল্লেখ্য, গতকাল শনিবার (২৬ জুলাই) চাঁদাবাজির সময় রাতে ওই বাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর গতকাল সংগঠন দুটি থেকে তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *