জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জামায়াতের তাহেরের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রকে সাংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে—এমন দাবি জানিয়েছেন সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের (Syed Abdullah Mohammad Taher), জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির। তিনি বলেন, এই দুই ঐতিহাসিক দলিলকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি না দিলে চলমান রাজনৈতিক সংলাপ অর্থহীন হয়ে পড়বে।

বুধবার (৩০ জুলাই) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক সংলাপের ২২তম দিনের মধ্যবর্তী চা-বিরতিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাহের বলেন, “জুলাই সনদ এবং ঘোষণাপত্রকে যেভাবে অতীতে পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোট ও প্রোক্লেমেশনে র‍্যাটিফাই করা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই সাংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে।”

তিনি জানান, দল হিসেবে জামায়াত জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের আইনি ভিত্তি এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার পক্ষে। ইতিমধ্যে তারা আইনজীবীদের একটি প্যানেলের (Panel of Lawyers) সঙ্গে আলোচনা করে বিকল্প আইনি পথ বের করেছে।

তাহেরের ভাষ্য অনুযায়ী, “আমরা অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি, তবে কিছু রিজার্ভেশন রয়েছে, যা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আকারে জমা দিয়েছি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ঐকমত্যের ভবিষ্যৎ কী? যদি আইনি কাঠামো তৈরি না হয়, তাহলে আলোচনার বাস্তব ফল কিছুই থাকবে না।”

তাহের স্পষ্ট করেন, “কেউ কেউ বলছে, পরবর্তী সংসদে গিয়ে আইন হবে। এটা অবাস্তব এবং অসামাজিক বক্তব্য। কেননা, ওই সংসদই তো এই সংস্কারের ভিত্তিতে গঠিত হওয়া উচিত। যদি পুরোনো নিয়মে নির্বাচন হয়, তবে সংলাপ অর্থহীন হয়ে যাবে।”

এই প্রসঙ্গে তিনি তুলে ধরেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও এরশাদের আমলে গণভোট ও প্রোক্লেমেশনের মাধ্যমে যেভাবে সাংবিধানিক বৈধতা দেওয়া হয়েছিল, তার উদাহরণ। তাহের বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতেও গণভোটের মাধ্যমে জনগণের অভিপ্রায় প্রকাশ পেয়েছে ৫ আগস্টে, আর সরকার গঠিত হয়েছে ৮ আগস্টে। সুপ্রিম কোর্ট কখনও বলে দেয়নি সরকারের মেয়াদ কত দিন—জনগণের ইচ্ছাই এখানে সর্বোচ্চ আইন।”

সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে তাহের বলেন, “আমরা চাই এই সনদ ও প্রোক্লেমেশনকে এখনই একটি সাংবিধানিক ঘোষণা হিসেবে প্রকাশ করা হোক। এর পরবর্তী সংসদে র‍্যাটিফিকেশন হলে আর কেউ এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। এর মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্যের আইনি ভিত্তি চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।”

তাহের আরও জানান, যদি বর্তমান সরকার এই কাজ করতে না পারে, তাহলে বিকল্প পথ নেওয়ার প্রস্তুতি তাদের আছে।

জুলাই ঘোষণাপত্র প্রসঙ্গে তাহের বলেন, “আমাদের হাতে আছে দুটি কাগজ—একটি জুলাই ঘোষণাপত্র, আরেকটি হলো জুলাই সনদ। সনদটি হচ্ছে এই সংলাপের আউটকাম। যদিও এর খসড়া এখনো অসম্পূর্ণ এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্য এতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। আমরা আজ অথবা কালকের মধ্যে লিখিত জবাব জমা দেব।”

নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিয়েও বক্তব্য রাখেন তাহের। জানান, জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান কমিটিতে ৪৩ শতাংশ সদস্য নারী। “যেখানে আরপিওতে বলা হয়েছে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখা বাধ্যতামূলক, সেখানে আমাদের দলে এর চেয়েও বেশি। অথচ যারা নারী অধিকারের কথা বেশি বলেন, তাদের দলে এই হার নেই,”—ব্যঙ্গ করে বলেন তিনি।

সংলাপের শেষ পর্বে জাতীয় ঐক্য কমিটির প্রেসিডেন্টের সরাসরি উপস্থিতি নিশ্চিত করার দাবিও জানান তাহের, যাতে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সোজাসুজি উপস্থাপন করা যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *