ঝালকাঠিতে এলজিইডি অফিসে বিল ছাড়াতে গিয়ে স্থানীয় ঠিকাদারদের হাতে আটক হয়েছেন দুই শিক্ষার্থী, যাদের বিরুদ্ধে ঘুষ প্রস্তাব ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে। পরে থানা হেফাজতে নেওয়া হলেও মুচলেকার মাধ্যমে ছাড়া পান তারা। ঘটনার জটিলতা বাড়ায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ও প্রকৌশল কর্মকর্তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসেন।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে, ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু (Amir Hossain Amu) এর কম্পিউটার অপারেটর শাওন খানের তিন কোটি টাকার একটি ব্রিজ ও সড়ক প্রকল্পের বিল ছাড়ানোর বিষয়ে। অভিযোগ রয়েছে, বরিশালের দুই যুবক—সিরাজুল ইসলাম (Sirajul Islam) ও মেহেদী (Mehedi)—সম্প্রতি একাধিকবার নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবীর (Iqbal Kabir)-কে চাপ প্রয়োগ করেন বিল ছাড়াতে। এমনকি ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাবও দেন বলে দাবি প্রকৌশলীর।
ঘটনার দিন দুপুর ২টার দিকে তারা ঝালকাঠি এলজিইডি অফিসে গিয়ে বিল না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে উপস্থিত বিএনপিপন্থী ঠিকাদাররা বিষয়টিকে সন্দেহজনক মনে করে দুই শিক্ষার্থীকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন।
সন্ধ্যার পরে থানা হেফাজতে নেওয়া হয় সিরাজুল ও মেহেদীকে। এরপর থানা প্রাঙ্গণে হাজির হন জেলা বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), যুবদল, ছাত্রদল নেতারা এবং স্থানীয় সাংবাদিকরা। ওসির কক্ষে আয়োজিত এক আলোচনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিএনপি ও অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মিলিত হন। তারা সম্মিলিতভাবে ঘটনার ভুল বোঝাবুঝি বলে চিহ্নিত করে একটি লিখিত আপসনামায় স্বাক্ষর করেন।
থানার সামনে যৌথ বিবৃতিতে সিরাজুল ও মেহেদী বলেন, “আমরা শুধু নির্বাহী প্রকৌশলীকে ঘুষ-দুর্নীতির তথ্য জানাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে উপস্থিত কিছু ঠিকাদার আমাদের ভুল বুঝে পুলিশের হাতে তুলে দেন।”
সিরাজুল ইসলাম ঝালকাঠি সদরের দোগলচিড়া গ্রামের ফল ব্যবসায়ী নুরুল বাশারের ছেলে এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব। মেহেদী বরিশালের কাকলীর মোড় এলাকার মুদি দোকানি কালামের ছেলে ও বরিশাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
এদিকে, নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবীর অভিযোগ করেন, প্রকল্পের কাজ এখনও শেষ হয়নি এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিল অনুমোদনের পূর্বশর্ত পূরণ না করায় তিনি বিল দিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, “ঘুষ দিয়ে বিল ছাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে, ওই দুইজন আমার বিরুদ্ধে দপ্তরে দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছে।”
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান (Moniruzzaman) বলেন, “উপস্থিত ঠিকাদারদের অভিযোগে ওই দুই শিক্ষার্থীকে আমরা থানায় নিয়ে আসি। তবে এলজিইডি থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা সমঝোতায় পৌঁছালে তাদের মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।”
ঘটনাটি স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। যদিও আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তবে প্রকৌশলী ইকবাল কবীর জানিয়েছেন, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।