রাজনৈতিকভাবে আ.লীগকে নিশ্চিহ্ন করলেই মিলবে মুক্তির পূর্ণতা: ফখরুল

আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিবাদী শাসন’ থেকে আপাত মুক্তির কথা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir) বলেছেন, এই মুক্তি পূর্ণতা পাবে তখনই, যখন আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করা যাবে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) বিকেলে ঢাকার উত্তরার আজমপুরে অনুষ্ঠিত এক গণসমাবেশে ফখরুল এসব কথা বলেন। মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে “জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান” বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে আয়োজিত সমাবেশে শহীদদের স্মরণে এ বক্তব্য দেন তিনি।

সমাবেশে তিনি বলেন, “যারা ব্যাংক লুট করে, চাঁদাবাজি করে, সম্পত্তি দখল করে নেয়, তাদের সঙ্গে কোনো আপস হবে না। আমরা তাদের কোনোভাবেই মেনে নেব না, তাদেরকে রাজনীতির মাঠে আর আসতে দেওয়া হবে না।”

ফখরুল বলেন, “খালেদা জিয়ার ওপর জনগণের যে আস্থা ছিল, এখন তারেক রহমানের ওপর সেই আস্থা গড়ে উঠেছে। মানুষ অপেক্ষা করছে, তিনি কবে দেশে ফিরে নেতৃত্ব দেবেন। আমরা প্রার্থনা করি—তিনি যেন শিগগির দেশে ফিরে আসেন এবং আমাদের ঐক্যবদ্ধ করেন।”

নতুন বাংলাদেশ গঠনের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “তারেক রহমান এমন এক বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা করেছেন, যেখানে ভোটাধিকার থাকবে, গরিব মানুষ উন্নয়নের সুযোগ পাবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।”
তিনি আরও জানান, নতুন বাংলাদেশে ‘ফার্মার্স কার্ড’, ‘স্বাস্থ্য কার্ড’, ‘ফ্যামিলি কার্ড’-এর মতো বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ আরোপ ও সরকারের ভূমিকা

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ট্যারিফ আরোপের বিষয়টি উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, “৩৫% ট্যারিফ বসানোর ফলে আমাদের ৫০ টাকার পণ্যের দাম দাঁড়াবে ১৩৫ টাকা। এতে পণ্য রপ্তানি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।”
তবে, তিনি জানান—পররাষ্ট্র দপ্তরের উদ্যোগে এই ট্যারিফ ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এজন্য তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, “তারা বড় দায়িত্ব পালন করেছে।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব ও সীমাবদ্ধতা

ফখরুল জানান, “আমরা আশা করেছিলাম শহীদদের একটি সঠিক তালিকা তৈরি করে তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। দুর্ভাগ্যবশত তা পুরোপুরি হয়নি, তবে সরকার চেষ্টা করছে।”
তিনি আরও বলেন, “গতকাল সংস্কার কমিশনের বৈঠক হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আশা করছি।”

আগামী নির্বাচনের প্রত্যাশা ও গণতান্ত্রিক সংকট

ফখরুল আশাবাদ জানিয়ে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা কথা দিয়েছেন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। দেশবাসীও চায়, একটি নির্বাচিত সরকার দেশ চালাক।”
তিনি বলেন, “আমি যদি এখন কোনো সমস্যায় পড়ি, আমার তো যাওয়ার জায়গা নাই। কোনো এমপি নাই, সংসদে কেউ আমার কথা বলবে না। এজন্য আমাদের দ্রুত নির্বাচন দরকার, যাতে আমরা পার্লামেন্টে আমাদের কথা বলতে পারি।”

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ইতিহাসের স্মরণ

এক বছর আগে উত্তরা উত্তাল হয়ে উঠেছিল উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, “শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগ আমাদের সংগ্রামের পথকে দৃঢ় করেছে। শহীদ পরিবারের বেদনার সঙ্গে আমরা সম্পূর্ণভাবে একাত্ম।”

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, যুগ্ম আহ্বায়ক এবিএমএ আবদুর রাজ্জাক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মনি, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, সাইফুল আলম নিরব, হাসান জাফির তুহিন, নুরুল ইসলাম নয়ন, রাজিব আহসান, সুলতানা আহমেদ, হেলাল খান, আবুল কালাম আজাদ, মোস্তফা জামান, এসএম জাহাঙ্গীর এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *