জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের প্রাক্কালে আবারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম (Mahfuz Alam)। সোমবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক বিস্তৃত পোস্টে তিনি বলেন, “জুলাই আমাদের সবার”—এটি কোনো নির্দিষ্ট দল, মত কিংবা গোষ্ঠীর একক অর্জন নয়। বরং এতে অংশগ্রহণ করেছে সমাজের প্রায় প্রতিটি স্তরের মানুষ, বিভিন্ন আদর্শিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
মাহফুজ তার পোস্টে লেখেন, “দলীয় বা আদর্শিক বিরোধের জেরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে কারো অবদান অস্বীকার করা উচিত না।” এরপর বিস্তারিতভাবে বিভিন্ন ছাত্র, যুব, শ্রমজীবী, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর অবদানের কথা তুলে ধরেন তিনি।
কে কেমন ভূমিকা রেখেছিল?
পোস্টে তিনি লিখেছেন, ইসলামী ছাত্রশিবির অভ্যুত্থানের সময় ‘জনশক্তি’ ও সাংগঠনিক সমন্বয় দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি দাবি করেন, বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে শিবিরের কর্মীরা অভ্যুত্থানকে এগিয়ে নিয়েছেন, কোথাও কোথাও নেতৃত্বও দিয়েছেন।
ছাত্রদল (Chhatra Dal) ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে “ফ্যাসিস্ট বাহিনীকে প্রতিরোধ করেছে, রাজপথে লড়াই করেছে এবং তৃণমূলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে” বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।
ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্রশক্তি, ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ, ছাত্র ফেডারেশনসহ বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর ভুমিকা ছিল মাঠে সক্রিয় থাকা, রাজনৈতিক বয়ান রক্ষা করা এবং সাংস্কৃতিক বলয়ের মধ্য দিয়ে সাহস ও সংহতি ছড়িয়ে দেওয়া।
উপদেষ্টা মাহফুজ আরও উল্লেখ করেন, আলেম ও মাদ্রাসা ছাত্রদের রাজপথে প্রতিরোধের কথা। বিশেষ করে যাত্রাবাড়ীকে তিনি একটি “উজ্জ্বল উদাহরণ” হিসেবে উল্লেখ করেন।
শ্রমজীবী শ্রেণি, প্রাইভেট শিক্ষার্থীরা, রিকশাচালক ও নিম্নবিত্তরা, এমনকি “উঠতি মধ্যবিত্ত”-এর অংশগ্রহণকেও তিনি উল্লেখ করেন সাহসিকতার প্রমাণ হিসেবে।
নারী সমাজের অংশগ্রহণ নিয়েও তিনি বলেন, “নারীরা রাজপথে লড়েছে এবং আহতদের সহযোগিতা করেছে। অভিভাবক বিশেষ করে মায়েরা, বোনেরা কার্ফিউর দিনগুলোতে এবং জুলাইয়ের শেষ থেকে রাস্তায় নেমে সাহস জুগিয়েছেন।”
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধের স্পটগুলোতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো “নীরব অথচ কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে।”
সবচেয়ে চমকপ্রদ মন্তব্যটি ছিল ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে। মাহফুজ বলেন, “ছাত্রলীগ (Chhatra League)-এর একটা অংশ বিদ্রোহ করে অভ্যুত্থানে যুক্ত হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, প্রবাসী শ্রমিক ও পেশাজীবীরা বাংলাদেশের এই লড়াইকে বৈশ্বিক পরিসরে পৌঁছে দিয়েছেন। কবি, সাহিত্যিক, পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল, সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার ও র্যাপারদের ভূমিকাও বিশেষভাবে স্মরণ করেন উপদেষ্টা।
“কার অবদান অস্বীকার করবেন?”
পোস্টের শেষে তিনি প্রশ্ন রাখেন, “জনগণের লড়াইয়ের কার কোন অবদান অস্বীকার করবেন?” তার এই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ইতিবাচক প্রশংসা যেমন কুড়িয়েছে, তেমনি বিতর্কও সৃষ্টি করেছে।
বহুজনের মতে, এটি ছিল অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে একটি খোলামেলা ও বাস্তব মূল্যায়ন। আবার কেউ কেউ এটিকে “রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিভাজনমূলক” বলেও মন্তব্য করেছেন।
তবে নিঃসন্দেহে, মাহফুজ আলমের এই স্ট্যাটাস চলমান রাজনৈতিক আলোচনাকে আরও উসকে দিয়েছে এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ঘিরে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক স্মরণ’-এর একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।