‘আপা আর আসবে না, কাকা আর হাসবে না’

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম (Saiful Islam) মনে করছেন, দেশে একটি সুপরিকল্পিত সাইবার ষড়যন্ত্র চলছে, যার মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক কনটেন্ট ছড়িয়ে জাতীয় ঐক্য নষ্ট করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তার মতে, এই প্রচারণা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং শত্রুরা আবারও ফিরে আসার পাঁয়তারা করছে। এমন এক পটভূমিতে তিনি মন্তব্য করেন—‘আপা আর আসবে না, কাকা আর হাসবে না’ বলার মাধ্যমে একটি ষড়যন্ত্রকে সামনে আনা হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসের এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। এই আয়োজনটি যৌথভাবে আয়োজন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সভায় শহীদ পরিবারের সদস্য এবং আহতদের সংবর্ধনা জানানো হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম (Farida Khanam)। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দিন (Md. Ziauddin), চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক আহসান হাবীব (Ahsan Habib) এবং নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ (Hasib Aziz) প্রমুখ।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, “আপনারা বুঝতেই পারছেন না, কীভাবে আপনাদের ঐক্যকে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। শত্রুরা কিন্তু চুপ করে বসে নেই, তারা নতুনভাবে ফিরে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এটি সাইবার ওয়ারফেয়ারের অংশ—অর্থাৎ মানসিকভাবে, ডিজিটালভাবে একটি সমাজে বিভক্তি সৃষ্টি করা। এ অপচেষ্টা প্রতিহত করতে না পারলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়বে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরাও প্রশাসনের লোক—আপনাদের সঙ্গে আমরাও যুক্ত। যদি ঐক্য নষ্ট হয়, তবে আমাদের পরিণতিও এক হবে। এই দেশকে রক্ষা করতে চাইলে, শত্রুর কবল থেকে মুক্ত করতে চাইলে, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা রাখতে হলে এখনই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়।”

সাইফুল ইসলামের আলোচিত বক্তব্যের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অংশ ছিল তার এই মন্তব্য: “আপনারা ষড়যন্ত্রকারীদের বলে দিন—আপা আর আসবে না, কাকা আর হাসবে না।” যদিও তিনি সরাসরি কোনো রাজনৈতিক নেতার নাম নেননি, কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের (Obaidul Quader)-কে ইঙ্গিত করেছেন।

সভায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পুলিশি ভূমিকাকে কেন্দ্র করে জনমনে তৈরি হওয়া নানা প্রতিক্রিয়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে অনেক সময় পুলিশকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। পুলিশের গুলিতে অতীতে কেউ মারা যায়নি—এমন নয়। তখন মানুষ ভুলত্রুটি মেনে নিয়েছে। কিন্তু এবারের জুলাই আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আমরাও ব্যথিত।”

তিনি মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে কিছু মুক্তিযোদ্ধার পথভ্রষ্ট হওয়ার উদাহরণ টেনে বলেন, “আমাদের মুক্তিযোদ্ধারাও স্বাধীনতার পর নানা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। কাজ না পাওয়ায় অনেকে দিক হারিয়ে ফেলেছেন। সেভাবেই এখন যারা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন, তাদের বলব—আন্দোলনের চেতনা ধরে রাখুন। বই পড়ুন, সমাজের জন্য কিছু করুন। ভবিষ্যৎ আপনাদের হাতেই।”

এই সভা ও বক্তৃতাগুলোর মধ্য দিয়ে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, সামাজিক বিভ্রান্তি ও জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের আশঙ্কা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সাইবার যুদ্ধ, বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকার ডাক এখন প্রশাসনের কণ্ঠেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *