সিলেটের অন্যতম রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন সংকট—জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি (National Citizen Party) থেকে পদত্যাগ করেছেন শহীদ সাংবাদিক আবু তাহের মোহাম্মদ তুরাবের ভাই, সিলেট জেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী আবুল আহসান জাবুর (Abul Ahsan Jabur)। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) তিনি দলটির প্রধান সমন্বয়কের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র দাখিল করেন।
পদত্যাগপত্রে জাবুর উল্লেখ করেছেন, তিনি এনসিপি সিলেট জেলা কমিটির ভবন পদে থাকার দায়িত্বে ছিলেন। তবে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দায়বদ্ধতার কারণে দলের কার্যক্রমে পর্যাপ্ত সময় দিতে অস্বস্তি বোধ করছেন। তাই নিজ ইচ্ছায়, সজ্ঞানে এবং অব্যাহতিসহ পদত্যাগ করেন তিনি। জাবুরের এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে নীরব নাটকের মতো ছড়িয়ে পড়ে।
এ নিয়েই সিলেটে একযোগে নয়জন নেতাকর্মী এনসিপি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। স্থানীয় পর্যায়ে দেখা গেছে, সম্প্রতি কমিটি ঘোষণার পর থেকেই দলের স্থানীয় স্তরে অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করে পদত্যাগের পথে চলে আসছেন। সূত্রে বলা হচ্ছে—কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া, কমিটি সংক্রান্ত অজানা সিদ্ধান্ত ও যোগাযোগের ঘাটতি সহ নানা অভিমতের কারণে নেতারা দল ছেড়েছেন।
জানা যায়, ১২ জুলাই নয়া কমিটি ঘোষণার পরপরই বিশ্বনাথ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার কমিটি থেকে চার নেতা পদত্যাগ করেন। গোয়াইনঘাট উপজেলা কমিটি থেকে সদস্য ফাহিম আহমদ ও যুগ্ম সমন্বয়কারী নাদিম মাহমুদ পদত্যাগের তালিকায় ছিলেন; আর বিশ্বনাথ উপজেলা থেকে যুগ্ম সমন্বয়কারী রুহুল আমিন ও সদস্য শাহেদ আহম্মেদ তাদের পদ থেকে সরে আসেন।
এরপর ২১ জুলাই গোয়াইনঘাট উপজেলা কমিটি থেকে আরও চার নেতা—যুগ্ম সমন্বয়কারী এনামুল হক মারুফ, সদস্য তরিকুল ইসলাম, কিবরিয়া আহমদ ও কামরুল হাসান—পদত্যাগ করেন। এ সিরিজ পদত্যাগ স্থানীয় সমর্থক ও নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে; দলীয় শৃঙ্খলা ও ভবিষ্যৎ কৌশল কীভাবে সাজানো হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় নেতা বলেন, “কমিটি গঠন নিয়ে অনেকেই ক্ষুব্ধ। কোন করণেইই দল তালিকাভুক্তদের সঙ্গে শুদ্ধ যোগাযোগ তৈরি হয়নি—ফলাফল আত্মীয়তার সুবিধাভোগী নয় এমন ধারণা। ফলে অনেকে নিজ অবস্থান বিবেচনা করে পদত্যাগ করছেন।”
জাবুরের পদত্যাগপত্র পেয়ে এনসিপি সিলেট জেলা শাখার শীর্ষস্থানীয়রা এখনও আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করাচ্ছেন, স্থানীয় স্তরের এমন ধাক্কা দলীয় সংগঠনের ভেতরে সমন্বয় ও নেতৃত্বগত প্রশ্নকে সামনে হাজির করবে।
এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে সিলেট বিভাগের রাজনীতিতে এনসিপির স্থান, স্থানীয় নেতা-সমর্থকদের দফা কর্মসূচি ও আগামী সময়ের পুনর্গঠন কৌশল—এসবই নজরে রয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যদি দ্রুত জবাবদিহি ও স্পষ্ট ঘোষণা না করেন, তবে অঞ্চলে এনসিপির সংগঠন আরও খারাপভাবে প্রভাবিত হতে পারে—বিশ্লেষকেরা এমনই আশঙ্কা করছেন।