জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চট্টগ্রাম মহানগর শাখার নতুন কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে আবারও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। বন্দরকেন্দ্রিক আন্দোলন দমাতে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়ার অভিযোগসম্বলিত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে নিজামের দাবি, তার বিরুদ্ধে একটি কুচক্রী মহল কাজ করছে। তিনি কথাগুলো দুষ্টুমি করে বলেছেন। টাকা নেননি।
সোমবার (১১ আগস্ট) এক ভিডিওতে নিজাম নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং টাকা নেওয়ার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ করেন।
ভিডিওতে নিজাম উদ্দিন বলেন, বিগত এক থেকে দেড় মাস ধরে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করে যাচ্ছে একটি কুচক্রী মহল। আজকেও আমার নামে একটি ভিডিও ভাইরাল করেছে। আসলে ভিডিওটি হলো, ৩০ মে রাতের, ১২টা ১০ বা ১৫ মিনিটের দিকের ঘটনা। তখন এক ছোট ভাই রিফাত আমাকে ফোন দেয়। তার সঙ্গে আমার বড় ভাই-ছোট ভাই সম্পর্ক। তার সঙ্গে দুষ্টুমি করে অনেক কিছু বলি। ওদিকে সে যে ট্রেপে পড়ে আছে সেটিও আমি জানি না। আমি আমার নরমাল কথাটাই বললাম। দুষ্টুমি করেই কথাটা বলললাম। কিন্তু সেই ভিডিওটাকে তারা ধারণ করে আমার নামে মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা ছড়িয়ে দিয়েছে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, কেউ যদি সেদিনের ঘটনায় ন্যূনতম প্রমাণ দিতে পারে আমি টাকা নিয়েছি, আমি চ্যালেঞ্জ করলাম আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের উচ্চতর লেভেলের যারা আছেন, ডিজিএফআই, এনএসআই থেকে শুরু করে আপনারা ৩০ মে রাতের ঘটনাটা ভালোভাবে যাচাই করুন। আমি জানি যে, এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছোটভাই রিফাতকে ফাঁসিয়ে আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ড্যামেজ করার জন্য পরিকল্পনা করছিল। দেশবাসী ও প্রশাসনের কাছে একটাই অনুরোধ ৩০ মে’র ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া দেড় মিনিটের ওই ভিডিওতে আফতাব হোসেন রিফাত নামে একজনকে নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে মেসেঞ্জার কলে কথা বলতে দেখা যায়, যেটি আরেকটি ফোনের মাধ্যমে ভিডিও করা হয়। শুরুতে আফতাব হোসেন বলেন, ‘যদি মীর ভাইয়েরা আন্দোলন বন্ধ না করে তখন কি করব?’ জবাবে নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আন্দোলন বন্ধ করাব। তোমারে দিছে, টাকা দিছে?’ এ পাশ থেকে ‘হ্যাঁ’ জবাব দেন আফতাব।
কত লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নে আফতাব বলেন ‘পাঁচ’। এরপর নিজাম উদ্দিনকে বলতে শোনা যায়, ‘আরও বেশি নিতা প্রেশার দিয়ে… তোমরা দেখ ওর থেকে আরও পাঁচ লাখ নিতে পার কি না, নিতে পারলে ওদেরকে আমি এনে, রোহান, মীরদের কিছু দিয়ে দিলাম।’
নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলা আফতাব হোসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক সমন্বয়ক বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
জানতে চাইলে নিজাম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এনসিপির কমিটি দেওয়ার পর পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। যার (রিফাত) সঙ্গে আমি কথা বলেছি সে আমার ছোট ভাই। সে স্টেটমেন্ট দিয়েছে। তাকে মারধর করে আমাকে ফোন দিতে বাধ্য করে। আমি তখন জানতাম না যে, রিফাতকে আটকে এসব করা হচ্ছে। আমি তার সঙ্গে দুষ্টুমি করে কথা বলি। এখন সেই অডিও নিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এর আগেও আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু সেটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে আফতাব হোসেন রিফাতকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে তিনি একটি ভিডিওতে দাবি করেন, তাকে জোর করে নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলানো হয় এবং মারধর করা হয়।
এর আগে ৫ জুলাই নিজামের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারকে চিঠি দিয়েছিলেন রিয়াজুল জান্নাত নামের এক নারী। চিঠিতে ওই নারী উল্লেখ করেন, দুই কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে তার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় পুলিশে দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী নেতা নিজাম উদ্দিন। এরপর নিজামকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে তাকে আবার সংগঠনে ফেরানো হয়।