আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনীতিতে উত্তাপ বাড়ছে। বড় ছোট সব রাজনৈতিক দলই এখন ব্যস্ত নির্বাচনী প্রস্তুতিতে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত রোডম্যাপের পর থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থী এবং আসন ভাগাভাগি নিয়ে জোর কদমে চলছে আলোচনা। এমন প্রেক্ষাপটে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman) চান, শুধু আন্দোলনেই নয়—নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এই মিত্রদের পাশে রাখতে।
দলীয় সূত্র জানায়, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা আসার পর থেকে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে ৪২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে। আগামীতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্বাচন বর্জন করা আরও ২২টি দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক আলোচনার পরিকল্পনাও রয়েছে। এছাড়া, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি (NCP) সহ কিছু নতুন দলকেও আলোচনার আওতায় আনার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই তালিকায় নেই জামায়াত ইসলামী বা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মতো দল।
রোববার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, তারেক রহমান বিভিন্ন মিত্র রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসে তাদের মতামত শুনছেন এবং অতীতের আন্দোলনে তাদের অবদানের যথাযথ মূল্যায়নের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “সমমনা ও মিত্রদলগুলো বিএনপির সঙ্গে থেকে রাজনৈতিক সংকট উত্তরণ এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে চায়।”
গত শুক্রবার ও শনিবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন তারেক রহমান। বিএনপি মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে তারেক রহমান বলেন, দীর্ঘ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। এবার নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক কল্যাণরাষ্ট্রে রূপান্তর করতে হবে।
অংশগ্রহণকারী নেতারা জানান, তিনি সবাইকে ৩১ দফা নিয়ে জনগণের কাছে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মিত্রদলগুলোর পক্ষ থেকেও নির্বাচনে বিএনপির পাশে থাকার অঙ্গীকার এসেছে। পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা যোগ্য নেতাদের নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত করার প্রস্তাবও উঠে এসেছে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, মোট ৬৮টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে ৬৪টি দল গত সরকারের আমলে নির্বাচন বর্জন করেছিল। এছাড়া, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত এনসিপি সহ আরও ৪টি দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
১২ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, “গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় আমরা দীর্ঘদিন লড়াই করেছি। এখন রোডম্যাপ ঘোষণা হয়েছে, ঐক্য অটুট রাখতে হবে।”
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানান, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের নিরাপত্তা, রাজনৈতিক বোঝাপড়া এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আলোচনা হবে নিয়মিত।
এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ মনে করিয়ে দেন, ২০১২ সাল থেকে বিএনপির সঙ্গে জোটে থাকার অভিজ্ঞতা এবং ২০২২ সালে জোট ভাঙলেও যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ধারাবাহিকতা। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিএনপি যোগ্য প্রার্থীর যথাযথ মূল্যায়ন করবে।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, “গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র গড়ার জন্য আমরা কাজ করছি, বিএনপিও সেই লক্ষ্যে এগোচ্ছে।” বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতন সহ্য করেও বিএনপির সঙ্গে ছিলাম, সামনে নির্বাচনী মাঠেও থাকবো।”
এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ জানান, তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব ও প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং প্রচারণা কৌশল নিয়েও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
৪২ দলের মধ্যে রয়েছে ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট (১১ দল), এলডিপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), লেবার পার্টি, চার দলীয় গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, গণফোরাম, এনডিএম, জন অধিকার, পিপলস পার্টি, ন্যাপ ভাসানী এবং আমজনতা দল।