সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম আকর্ষণ ছিল জৈন্তাপুর উপজেলার সীমান্তঘেঁষা রাংপানি (Rangpani)। একসময় ‘শ্রীপুর’ নামে পরিচিত এই জায়গায় শুটিং হয়েছিল সালমান শাহ (Salman Shah)সহ বহু জনপ্রিয় অভিনেতার সিনেমার। ঝরনার স্রোতের সঙ্গে পাথর ও বালুর অনন্য মিতালি এখানকার প্রধান বৈশিষ্ট্য। অথচ সেই রাংপানি এখন হারাচ্ছে অস্তিত্ব—অবাধ পাথর লুটপাটে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে পুরো এলাকা।
দিনদুপুরেই চলছে পাথর চুরি। সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় এখানে প্রবেশ করতেই হয় বিজিবি (BGB)-এর চোখ এড়িয়ে, না হলে জবাবদিহির মুখে পড়তে হয় পর্যটকদের। অথচ বিস্ময়করভাবে ঠিক একই জায়গায় বিজিবির সামনেই চলে অবাধ পাথর লুটপাট। স্থানীয়দের অভিযোগ, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কয়েক বছর আগেই শুরু হয়েছিল এই অবৈধ কর্মকাণ্ড। বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা লুটপাটের কারণে রাংপানির বুকে তৈরি হয়েছে গভীর গর্ত। প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও কার্যত কিছুই থামছে না।
স্থানীয় কয়েকজনের দাবি, আগে আওয়ামী লীগের নেতাদের সমন্বয়ে লুটপাট চালানো হতো। আর এখন ইউনিয়ন বিএনপি ও যুবদলের দুজন প্রভাবশালী নেতা এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারা নাকি পুলিশ-বিজিবির নাম ব্যবহার করে টাকা তোলেন এবং লুট করা পাথর জমা রাখেন রাংপানি ক্যাপ্টেন রশিদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের পেছনে। সেখান থেকে ট্রাক ভরে দেশের নানা জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হয় এসব পাথর।
জৈন্তাপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তার লাবণী (Farzana Akter Laboni) গণমাধ্যমকে বলেন, “অতীতে আমরা এখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি। এখন প্রতিদিনই বিভিন্ন স্পটে অভিযান চলছে। ওই জায়গাতেও শিগগির অভিযান চালানো হবে।”
এদিকে সিলেটের সালুটিকরে গতকাল সকালে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অন্তত ১১ হাজার ঘনফুট মাটিচাপা পাথর জব্দ করা হয়। এ সময় সিলেট সদরের ছালিয়ার মৃত সোনা মিয়ার ছেলে হেলাল আহমদ (৩০) ও হবিগঞ্জের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে ফাহিম মিয়া (২৮) নামের দুজনকে আটক করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশিক মাহমুদ কবিরের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ক্রাশার মিলের আঙিনা থেকে এসব পাথর উদ্ধার করা হয়।
শুধু তাই নয়, ভোলাগঞ্জে এক পাথর ব্যবসায়ীর বাড়িতে গভীর রাতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, ভারতীয় মদসহ চারজনকে আটক করেছে। আটক ব্যক্তিরা হলেন কুতুব উদ্দিন ওরফে পাগলা শাহ (৫৪), আব্দুল ওয়াহিদ (৫৫), তাঁর ছেলে জাহিদ আহমদ (২২) এবং রুহেল আহমদ (২৬)। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানান, অভিযানের পর তাদের থানায় হস্তান্তর করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সিলেটের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় প্রশাসনের নানা পদক্ষেপের ঘোষণার পরও যে লুটপাট বন্ধ হচ্ছে না, তা নতুন করে প্রশ্ন তুলছে সরকারি সদিচ্ছা ও কার্যকারিতা নিয়ে। একদিকে প্রশাসনের অভিযান, অন্যদিকে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দাপুটে সিন্ডিকেট—রাংপানি যেন এই দ্বন্দ্বের মাঝে হারিয়ে ফেলছে তার স্বাভাবিক অস্তিত্ব ও সৌন্দর্য।