ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসির বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রকাশ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ (Akhtar Ahmed) এ রোডম্যাপ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ভোটগ্রহণের অন্তত ৬০ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। তবে ভোটের সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে আখতার আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে কমিশনকে জানানো হয়েছে—আগামী রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আগামী বছরের ১৭ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রমজান শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসেবে ভোট অনুষ্ঠিত হবে রমজানের আগেই।

ইসির ঘোষিত রোডম্যাপে মোট ২৪ দফা কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো—সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ শুরু, যা চলবে দেড় মাসব্যাপী। এ সংলাপে অংশ নেবেন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, নারী সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমের সম্পাদক ও সাংবাদিক, দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ এবং আহত মুক্তিযোদ্ধারা।

৩০ নভেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এর অন্তত তিন দিন আগে আসনভিত্তিক চূড়ান্ত তালিকা পাঠানো হবে রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তাদের কাছে। এছাড়া নির্দিষ্ট সংখ্যক ছবিসহ ভোটার তালিকা ছাপানোর নির্দেশও দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় ধাপের সম্পূরক খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, যা চূড়ান্ত হবে ৩১ আগস্ট। পরে ৩১ অক্টোবরের সম্পূরক তালিকার পর ৩০ নভেম্বর প্রকাশ পাবে পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা।

নির্বাচনী আইন ও বিধিমালা সংস্কারও রোডম্যাপের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)সহ সংশোধনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এর পাশাপাশি সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন, ভোটার তালিকা আইন, ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালা এবং নির্বাচন পরিচালনা আইন সংশোধনের প্রক্রিয়াও চলবে। এসব কাজ শেষ করার লক্ষ্য ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।

রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু হবে সেপ্টেম্বরেই। মধ্য সেপ্টেম্বর প্রাথমিক নিবন্ধন আর মাসের শেষে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। একই সময়ে সংসদীয় আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ এবং জিআইএস ম্যাপ তৈরি ও প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে।

পোস্টাল ভোটিং ও ব্যালট ব্যবস্থাপনা নিয়েও বিস্তারিত পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। সফটওয়্যার, মোবাইল অ্যাপ ও নিবন্ধন-ট্র্যাকিং মডিউল উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন হবে অক্টোবরে। নভেম্বরে প্রবাসীদের জন্য ব্যালট পেপার পাঠানো হবে, আর কারাবন্দীদের ব্যালট পাঠানো হবে ভোটের দুই সপ্তাহ আগে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নির্বাচন কমিশন সেপ্টেম্বরে, তফসিল ঘোষণার আগে-পরে এবং নির্বাচনকালীন সময়ে ধারাবাহিক বৈঠক করার পরিকল্পনা করেছে। এ ছাড়া নির্বাচনী বাজেট বরাদ্দ, প্রচারণা কার্যক্রম, টেলিযোগাযোগব্যবস্থা সুসংহতকরণ, ডিজিটাল মনিটর স্থাপন, নির্বাচনী দ্রব্যাদি সংগ্রহ, প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, ব্যালট বাক্স প্রস্তুতকরণ ও প্রাথমিক ফলাফল প্রচার—সবকিছুই কর্মপরিকল্পনার আওতায় রাখা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে, রমজানের আগে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনও নিশ্চিত করেছে যে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই তফসিল ঘোষণা করা হবে।

ঘোষিত রোডম্যাপের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে—ভোটকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ধাপ বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *