দিনাজপুরে জীবন মহল পার্ক ও দরবারে তৌহিদী জনতার হামলা, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগে আহত অন্তত ২০

দিনাজপুরে ‘জীবন মহল’ পিকনিক ও বিনোদন স্পট এবং জীবনীয়া দরবারকে ঘিরে তীব্র সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে বিরল উপজেলার কাঞ্চন মোড়ে ঘটে যাওয়া এ সহিংসতায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে আলাদা করে শান্তি ফিরিয়ে আনে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জীবন মহল পার্ক ও রিসোর্টের কর্মচারীরা এবং তৌহিদী জনতার ব্যানারে আলেম-ওলামা ও মাদরাসাশিক্ষার্থীরা একই স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করতে গেলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দুপুর আড়াইটার দিকে জীবন মহল পার্ক রিসোর্ট ও জীবনীয়া দরবারের কর্মচারীরা মানববন্ধন শুরু করলে, শহর ও বিরল থেকে আসা তৌহিদী জনতার দুটি মিছিল সেখানে গিয়ে অবস্থান নেয়। ঠিক তখনই উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয় এবং তা দ্রুত সংঘর্ষে রূপ নেয়।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে তৌহিদী জনতা জীবন মহল পার্ক রিসোর্ট ও দরবারের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। পিকনিক স্পটের ভেতরের বেশ কিছু স্থাপনা ভাঙচুর করার পাশাপাশি জীবনীয়া দরবারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে দরবারটি পুড়ে যায় এবং দুটি মাইক্রোবাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একইসঙ্গে ১০টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সংঘর্ষ চলাকালে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপে অন্তত ২০ জন আহত হন। এ সময় দুষ্কৃতকারীরা বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে বিকেল ৪টার দিকে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন (Marufat Hossain) এবং সাড়ে ৪টার দিকে জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম (Rafiqul Islam) ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে তৌহিদী জনতা সরে যায়।

দিনাজপুর জেলা হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মাওলানা মতিউর রহমান কাসেমী (Maulana Matiur Rahman Kasemi) এ ঘটনায় বলেন, “জীবন মহল পার্ক রিসোর্ট ও জীবনীয়া দরবারে দীর্ঘদিন ধরে অসামাজিক কার্যক্রম চলছে এবং দরবারের নামে মানুষকে প্রতারিত করা হচ্ছে। বহুবার প্রতিবাদ জানিয়েছি, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের মালিক ড. আনোয়ার চৌধুরী জীবন কোনো পদক্ষেপ নেননি। তাই আমাদের বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামতে হয়েছে।” তিনি আরও জানান, প্রশাসন তাদের কাছে কিছু সময় চেয়েছে, তাই আপাতত তারা ফিরে যাচ্ছেন।

পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে বলেন, তৌহিদী জনতার প্রতিনিধি ও প্রশাসন একসঙ্গে এসপি কার্যালয়ে বৈঠক করবে এবং আলোচনার মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে জীবন মহল পার্ক রিসোর্ট ও দরবারের মালিক ড. আনোয়ার চৌধুরী জীবনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *