বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহুদিন ধরেই আলোচনার বাইরে থেকেছে জামায়াতে ইসলামি (Jamaat-e-Islami) নামক রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ কাঠামো ও কার্যপ্রণালী। কিন্তু এই দলটির ‘অবসকিউর’ ও ‘রিজিমেন্টেড’ স্ট্রাকচারের পেছনে যে গভীর রাজনৈতিক কৌশল লুকিয়ে রয়েছে—তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছেন নাজমুল আহসান (Nazmul Ahsan), ব্লুমবার্গের একজন সাংবাদিক। তার বিশ্লেষণমূলক ফেসবুক পোস্টটি সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার ঝড় তুলেছে। তিনি জামায়াতের দায়সারা জনঅ্যাকাউন্টেবিলিটি, অদৃশ্য নেতৃত্ব কাঠামো, এবং তুলনামূলকভাবে বিএনপি-আওয়ামী লীগের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ‘দায়’—সবকিছু মিলিয়ে এক প্রশ্ন তুলেছেন: জামায়াতের জন্য কি আমাদের স্ক্রুটিনির মাত্রা যথেষ্ট? নাকি এখন সময় এসেছে সেই গোপনতাকে উন্মোচন করার?
মূল পোস্টটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো—
জামায়াতের স্ট্রাকচার কীভাবে দলটাকে পাবলিক অ্যাকাউন্টেবিলিটি থেকে সুরক্ষিত রাখে, সেটা ফ্যাসিনেটিং। এর কিছুটা ধারণা আমাদের সবার আছে (e.g., গুপ্ত ভাবে অপারেট করা, ইত্যাদি)। কিন্তু এটার প্রকৃত এক্সটেন্ট আরও অনেক অনেক গভীরে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মতো দলে পদ হলো প্রকাশ্যে জানান দেয়ার বস্তু। জামায়াতে তেমন নয়। যেহেতু রিজিড ও রেজিমেন্টেড, সেহেতু তাদের সভাপতি বা সেক্রেটারি ছাড়া তেমন কাউকে আপনি চিনবেন না। সেটা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যেমন সত্য, জেলা পর্যায়েও তেমনই। উপজেলা পর্যায়ে থেকেই আপনি আর দলিলিকভাবে জানবেন না কে শিবির করে বা জামায়াতের পদধারী নেতা কে।
এতে করে যা হয় যে একটা ওয়ার্ড পর্যায়ের যুবদল কর্মীর অপরাধের দায় একেবারে কেন্দ্রীয় বিএনপির উপর আসে। অথচ, এই দলগুলো এত বড় যে একটা ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মীর নাম কেন্দ্রীয় যুবদল বা বিএনপি দূরে থাক, তাদের উপজেলা পর্যায়ের সভাপতিরই জানা থাকে না। অথচ, তার ধর্ষণ বা অপরাধের দায় তাকে নয়, একেবারে জেলা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় যুবদলকেই নিতে হয় বা হবে। এটা একটা অত্যন্ত লো বার অব অ্যাকাউন্টেবিলিটি।
অপরদিকে এমনকি জেলা পর্যায়ের অঘোষিত কমিটির শিবির বা জামায়াত সদস্যের (“সদস্য জামায়াত ও শিবিরে অনেক বড় পদ) কুকীর্তি আপনি জানবেনই না। কেনোনা আপনি জানেন না তারা করা। ফলে কেউ যদি ভেগলি বলেও যে অমুক শিবির নেতা বা জামায়াত নেতা, জামায়াত বা শিবির সেটা ডিনাই করার সুযোগ পায় ও করেও। ফলে বিষয়টা ঐখানেই শেষ। দল হিসেবে সামগ্রিক জামায়াতের উপর এই দায়টা আসার কোনো পথই নাই!
কোনো জামায়াতের বেটারে বলতে দেখলাম যে, ‘এই ট্যাগিং করাটা ঠিক হয় নাই, আপনারা শুধরান।’ বরং দেখলাম যে ইনিয়ে-বিনিয়ে ও নানা ইয়ে করে বোঝানো হচ্ছে যে প্রকাশ্যে একটা মোস্ট ওয়াচড চ্যাট-শোতে একজন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা-আবশ্যকীয় করে ফেলা যায়। এবং দ্যাট’স ওকে।
আমার কিউরিওসিটির জায়গা হলো, জামায়াতকে পরামর্শ দেয়া লোকদের সংখ্যা এত কম কেন? আমি নিজেও বিএনপিকে কত আজাইরা পরামর্শ দিতে গেছি (যেমন: কেন তাদের অমুক করা উচিত, কেন তাদের তমুক সংস্কার মেনে নেয়া উচিত, ইত্যাদি), কিন্তু জামায়াতকে তো দিতে যাই নাই।
এটা কি এমন যে “যত দোষ নন্দ ঘোষ?” নাকি এটা এমন যে বিএনপিকে ভাবা হয় যে দলটাকে পরামর্শ দিয়ে ভালো করে ফেলা যাবে, অন্যদের করা যাবে না, তাই অন্যদেরকে দিয়ে কী লাভ? বিএনপি বেশি রিসেপ্টিভ অন্যদের তুলনায়? নাকি বিষয়টা অনেকটা এমন হয়ে যায় যে, সন্তান যেটা একটু ঘাড় ত্যাড়া, তার সবরকম বদমাইশি মেনে নিতে বলা হয় বুঝদার ছেলেটাকে? সবাই মিলে সব কম্প্রোমাইজ চাপিয়ে দিতে যায় একটু নরম সন্তানটার উপর?
জামায়াতের মধ্যে আমাদের ট্র্যাডিশনাল সেন্সে আত্মশুদ্ধির কোনো তাড়না, লক্ষণ কিংবা ইচ্ছা আমি দেখি নাই। তারা তাদের নিজেদের সংজ্ঞায়িত কনভিকশনে অটল। তারাই ঠিক। এই কারণে মাঝেসাঝে চিল্লাফাল্লা হলেও তারা তাদের কোনো কর্মীকে কারণ পর্যন্ত দর্শাতে বলে না; বহিষ্কার তো দূরে থাক। বলে যদি থাকেও, সেটা ইন্টারনালি। পাবলিকের জানার সুযোগ হয় না। ফলে পাবলিক যেই অ্যাকাউন্টেবিলিটি সেটার আড়ালেই থেকে যায় তারা।
জামায়াতের স্ট্রাকচার কীভাবে দলটাকে পাবলিক অ্যাকাউন্টেবিলিটি থেকে সুরক্ষিত রাখে, সেটা ফ্যাসিনেটিং। এর কিছুটা ধারণা আমাদের সবার আছে (e.g., গুপ্ত ভাবে অপারেট করা, ইত্যাদি)। কিন্তু এটার প্রকৃত এক্সটেন্ট আরও অনেক অনেক গভীরে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মতো দলে পদ হলো প্রকাশ্যে জানান দেয়ার বস্তু। জামায়াতে তেমন নয়। যেহেতু রিজিড ও রেজিমেন্টেড, সেহেতু তাদের সভাপতি বা সেক্রেটারি ছাড়া তেমন কাউকে আপনি চিনবেন না। সেটা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যেমন সত্য, জেলা পর্যায়েও তেমনই। উপজেলা পর্যায়ে থেকেই আপনি আর দলিলিকভাবে জানবেন না কে শিবির করে বা জামায়াতের পদধারী নেতা কে।
এতে করে যা হয় যে একটা ওয়ার্ড পর্যায়ের যুবদল কর্মীর অপরাধের দায় একেবারে কেন্দ্রীয় বিএনপির উপর আসে। অথচ, এই দলগুলো এত বড় যে একটা ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মীর নাম কেন্দ্রীয় যুবদল বা বিএনপি দূরে থাক, তাদের উপজেলা পর্যায়ের সভাপতিরই জানা থাকে না। অথচ, তার ধর্ষণ বা অপরাধের দায় তাকে নয়, একেবারে জেলা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় যুবদলকেই নিতে হয় বা হবে। এটা একটা অত্যন্ত লো বার অব অ্যাকাউন্টেবিলিটি।
অপরদিকে এমনকি জেলা পর্যায়ের অঘোষিত কমিটির শিবির বা জামায়াত সদস্যের (“সদস্য জামায়াত ও শিবিরে অনেক বড় পদ) কুকীর্তি আপনি জানবেনই না। কেনোনা আপনি জানেন না তারা করা। ফলে কেউ যদি ভেগলি বলেও যে অমুক শিবির নেতা বা জামায়াত নেতা, জামায়াত বা শিবির সেটা ডিনাই করার সুযোগ পায় ও করেও। ফলে বিষয়টা ঐখানেই শেষ। দল হিসেবে সামগ্রিক জামায়াতের উপর এই দায়টা আসার কোনো পথই নাই!
এসব নিয়ে তুলনামূলক পর্যালোচনা হয় নাই তেমন। করার সময় এসেছে। জামায়াতের এই অবসকিউর দলীয় স্ট্রাকচারটাকে প্রকাশ্যে আনাটা জনস্বার্থের জন্য জরুরী। মানুষের বিচার করতে পারার জন্য অত্যন্ত জরুরী। এটা যদি জামায়াত বা শিবির নিজেরা না করে, তাহলে ক্রাউডসোর্স করে করতে হবে। আগামী ১০-২০ বছরে ক্ষমতায় যাবে, এমন দল সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানাটা বাংলাদেশের জনগণের হক।
এই প্রসঙ্গে আনরিলেটেড আরেকটা বিষয় হলো: যদিও জামায়াতের টাকা পয়সার লেনদেন মাচ বেটার; তবে অন্যান্য অনেক জোচ্চুরি যেগুলোকে মডার্ন রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ও ধর্মীয় নৈতিক বিবেচনায় দুর্নীতি ও ফ্রড হিসেবে বিবেচনা করা হয় (যেমন: নেপোটিজম, পাবলিক কোম্পানির চাকরি-বাকরিতে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব, জনগণের রাখা আমানত থেকে বা পাবলিক কোম্পানির প্রফিট থেকে অর্থ দলীয় কাজে ও দলীয় প্রকাশনার কাজে ব্যবহার করা), এগুলো একেবারে মডার্ন সেন্সে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট ও ক্ষেত্র বিশেষে আত্মসাৎ ও ফ্রডের সমতুল্য।
এই বিষয়গুলো নিয়ে সিরিয়াস কাজ দেখি নাই। একটা কারণ হলো, এই ধরণের নুয়ান্সড দুর্নীতি ও আমানতের খেয়ানতের চেয়ে আরও অনেক ওবার্ট দুর্নীতি ও পুকুর-চুরি বাংলাদেশে হয় ও হয়েছে। বাংলাদেশে তো মানুষ শত কোটি টাকার নিচের দুর্নীতিকে দুর্নীতিই মনে করে না। কিন্তু নতুন বাংলাদেশে এই ধুরন্ধর ফাঁকিবাজিগুলোর দিকেও তাকানোর সময় এসেছে। বিশেষ করে জামায়াতের রাইজিং প্রোফাইলের সঙ্গে ম্যাচ করে তাদের প্রোপোর্শনেট স্ক্রুটিনি হওয়াটা জনস্বার্থেই দরকার।