দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন (Sheikh Bashir Uddin)। তাঁর মতে, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশকে কার্যত ‘সোনার খনিতে’ রূপান্তর করা সম্ভব।
শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের হোটেল রেডিসন ব্লুতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘ব্যবসার ভবিষ্যৎ: উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন’-এর সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Chittagong) ব্যবসা গবেষণা ব্যুরো। বক্তৃতা শেষে উপদেষ্টা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন।
‘জ্ঞানার্জনের কোনো মনোপলি নেই’
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “আমাদের দেশে পণ্য উৎপাদনে কাঁচামালের অভাব রয়েছে ঠিকই, তবে জ্ঞানার্জনের মধ্য দিয়ে সে অভাব পূরণ করা সম্ভব। আল্লাহ কাউকে জ্ঞানার্জনের উপর মনোপলি দেননি। যার যত প্রচেষ্টা, তার তত অর্জন।” তিনি আরও বলেন, এখানে কোনও ‘সিন্ডিকেট’ কাজ করে না—এটি পুরোপুরি ব্যক্তির সক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল।
বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, দেশের অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে ‘লেবার প্রডাক্টিভিটি’, ‘ইউটিলিটি প্রপোরশন’, ‘লজিস্টিক এক্সিলেন্স’, ‘কস্ট টু ফিন্যান্স’, ‘এক্সেস টু ফিন্যান্স’ এবং ‘এক্সেস টু মার্কেট’ নিশ্চিত করতে হবে। এর মাধ্যমে কাঁচামালের ঘাটতি পূরণ করে টেকসই অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
‘গণঅভ্যুত্থানের পর বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা ছিল কঠিন’
রমজান মাসে বাজার ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “সরকারের অর্থ বিভাগ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত প্রচেষ্টায় তখন সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক ছিল, যার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও তুলনামূলকভাবে কম ছিল।”
তবে তিনি মনে করিয়ে দেন, গণঅভ্যুত্থানের পর বাজার পরিচালনা করাটা ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাঁর ভাষায়, “তথাকথিত সিন্ডিকেটের অনেক সদস্যই তখন দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল। সেই সময়ে সাপ্লাই সাইড ঠিক রাখা ছিল কঠিন। কিন্তু আমরা সম্মিলিতভাবে সেটি মোকাবিলা করেছি।” তিনি আরও বলেন, “এটি সম্ভব হয়েছে ব্যবসায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং মহান আল্লাহর অনুগ্রহে।”
‘ফ্যাসিস্ট শাসকদের সময় সম্পদের সুষম বন্টন হয়নি’
এক প্রশ্নের জবাবে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “গত ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনের সময়ে তারা নিজেদের ঘনিষ্ঠদের দিয়ে ‘ক্রোনি’ তৈরি করেছিল। এদের দেশের অর্থনীতিতে কোনও ভূমিকা ছিল না, বরং বাজার ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করেছিল।”
তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার পতনের সময় দেশের রিজার্ভ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলারের মতো। আমাদের দায় ছিল ৬ বিলিয়ন। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) এর নেতৃত্বে আমরা সে দায় পরিশোধ করেছি। এখন রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলারে।”
ভবিষ্যতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সম্পর্কে মতামত জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, “যদি নতুন সরকার সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে বাজার পরিচালনা করে এবং নিরপেক্ষ সংস্কার কার্যকর করে, তাহলে বাজার ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে এবং সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত হবে।”
সম্মেলনে উপাচার্য-উপ-উপাচার্যদের উপস্থিতি
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. তৈয়ব চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আইয়ুব ইসলাম এবং সোনালী ব্যাংক পিএলসি (Sonali Bank PLC)’র চেয়ারম্যান মুসলিম উদ্দিন চৌধুরী।
সমাপনী বক্তব্য শেষে শেখ বশিরউদ্দীন ব্যবসা-বাণিজ্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।