শনিবার রাতের একটি ফেসবুক পোস্টে শক্ত সুরে সতর্ক করেছেন রাশেদ খাঁন (Rashed Khan), যিনি গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, যদি আবার নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়, তাহলে সেটি গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত্য ঘটাতে পারবে না—বরঞ্চ বিভাজন আরও গভীর হবে। সেই বিভাজনের সুযোগেই বাংলাদেশে আরেকটি ১/১১ আসতে পারে, বিষণ্ণ পূর্বাভাস দেন তিনি।
রাশেদ খাঁন বলেন, “ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস স্যারের সমালোচনা আমি করেছি এবং করবোও। তবু তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পক্ষে আমি নই।” এখানে তিনি ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)-এর নাম তুলে ধরেছেন, একই সঙ্গে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন—সমালোচনা আলাদা, ক্ষমতা থেকে অপসারণ আলাদা।
রাশেদ আরও বলেন, নতুন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ফলে গণঅভ্যুত্থানের অন্যান্য অংশগ্রহণকারীরা বিভক্ত হলে “সেই সুযোগে বাংলাদেশে আরেকটি ১/১১ নেমে আসবে।” তিনি জানাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের সদস্য বা উপদেষ্টা হিসেবে যারা যুক্ত ছিলেন—যেমন ইউনূসসহ অনান্য উপদেষ্টারা—তাদের গ্রেফতার করা হতে পারে এবং অন্যান্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীর অভিযোগে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি ঘটনার সম্ভাব্য দিশাহীনতা ও বিভাজনকে এক ধরণের বিদেশি হস্তক্ষেপের ফল হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন—“আমার কাছে মনে হচ্ছে কোনো বিদেশি এজেন্সি গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলোকে ভাগাতে কাজ করছে। হয়তো দলগুলো তা বুঝছে না।” কথাগুলোতে উদ্বেগ কড়া। শেষপর্যন্ত রাশেদ খাঁন বলেন, দেশের স্বার্থ ও জনগণের রক্ষার্থে তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই; ব্যর্থ হলে পুরো বাংলাদেশের স্বপ্ন বিনষ্ট হবে—এই আশঙ্কাই তিনি ব্যক্ত করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনাবলির স্মৃতি আবারও ঘুরে ফিরে আসছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আলোচনায়। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, জামায়াতে ইসলামি (Jamaat-e-Islami) সেবার যেভাবে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে ১/১১ এর পটভূমি তৈরি করেছিল, এবারও ঠিক তেমনি ‘পিআর’-এর দাবিতে মাঠ গরম করে আবারো একই উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ১/১১-এর সময় ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা সফল হলে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক সুবিধা যেসব দল পেতে পারতো, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল জামায়াত। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির মতো বড় দল কোনও কর্মসূচি ঘোষণা না করলেও, জামায়াত নিজেরাই রাস্তায় নামে এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে ওঠে। অনেকের মতে, জামায়াত যদি সেদিন মাঠে না নামতো, পরিস্থিতি হয়তো সেদিনের মতো সংকটাপন্ন হতো না।
এমনও অভিযোগ রয়েছে যে, জামায়াত সেদিন ইচ্ছাকৃতভাবে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে ফেলে এবং এর ফলে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উত্থানের পথ সহজ হয়। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হলো, পরবর্তীতে ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জামায়াতের একজন নেতাও গ্রেপ্তার হননি—যা রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আবার যদি কোনওভাবে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ১/১১ ধরনের অবস্থা তৈরি হয় তাহলেও সবচেয়ে লাভবান হতে পারে জামায়াতই। কারণ, তারা মাঠে সক্রিয় থেকেও বারবার সংঘাতে সরাসরি জড়িত না হয়ে ধূর্ত রাজনৈতিক ফায়দা লুটে নিতে সক্ষম হয়েছে। তার সবচেয়ে বড় প্রমান জাতীয় পার্টির ১০ বছরের স্বৈরাশাসকের সময়, জামায়াত টানা ১০ বছর এরশাদের স্বৈরাশাসকের দোসর হিসাবে থেকে নিজের দলকে শক্তিশালী করেছিল।
বর্তমানে যে পিআর আন্দোলনের কথা বলা হচ্ছে, সেটিকে কেন্দ্র করে জামায়াত যেভাবে সক্রিয় হচ্ছে, তাতে অনেকেই আশঙ্কা করছেন—তারা আবারও ১/১১ এর মতো একটি অস্থিরতা তৈরির পথে এগোচ্ছে কি না। অতীত ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, রাজনৈতিক উত্তাল সময়ে জামায়াতের ধূর্ত ভূমিকা বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে।