কুমিল্লার হোমনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তিমূলক পোস্টকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার আসাদপুর ইউনিয়নের আসাদপুর গ্রামে চারটি মাজারে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এর মধ্যে একটি মাজারসংলগ্ন তিনটি বসতঘরে ভাঙচুর শেষে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে কয়েক শ মানুষ মাইকে ঘোষণা দিয়ে একত্রিত হন। এরপর তারা আলেক শাহর বাড়িতে অবস্থিত কফিল উদ্দিন শাহের মাজারে প্রথম হামলা চালান। তারপর মহসিন পরিবারের তিনটি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা পরবর্তীতে একই গ্রামের আবদু শাহ, কালাই (কানু) শাহ ও হাওয়ালি শাহের মাজারেও হামলা চালায়। হাওয়ালি শাহ নামে পরিচিত স্থাপনায় আগুন দেওয়া হয়, অন্যগুলো ভেঙে ফেলা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, এ ঘটনার সূত্রপাত আলেক শাহর ছেলে মহসিনের ফেসবুক পোস্ট থেকে। বুধবার সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে তিনি মহানবীকে নিয়ে কটূক্তিমূলক মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা হোমনা থানার সামনে বিক্ষোভ করেন এবং তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। পুলিশ সেদিনই মহসিনকে আটক করে। পরে বাংলাদেশ ইসলামী যুবসেনা হোমনা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। বৃহস্পতিবার সকালে মহসিনকে কুমিল্লার আদালতে প্রেরণ করা হয়। পুলিশের দাবি, তিনি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পোস্ট করার কথা স্বীকার করেছেন এবং এর প্রমাণও পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, মহসিনকে আটক করার পর ভেবেছিলেন পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালেই আলেম সমাজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের উসকানিতে কয়েক শ মানুষ মাজারগুলোতে হামলা চালায়। ফলে মাজারে বিশ্বাসী মানুষজন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
মামলার বাদী শরিফুল ইসলাম বলেন, মহসিন দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকে ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে আসছিলেন। আগে ব্যবস্থা নেওয়া হলে আজকের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতো না।
কুমিল্লার সহকারী পুলিশ সুপার (হোমনা সার্কেল) মো. আবদুল করিম জানান, এ হামলায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়, এমনকি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও ছিল। চারটি মাজার ও কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আলেক শাহর বাড়ি।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান বলেন, “ঘটনাটি এখানেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজকের হামলা পুরোপুরি অপরাধমূলক। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা উসকানি দিয়েছে, তাদেরও চিহ্নিত করা হবে।” তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় নতুন মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং জড়িতদের শনাক্তে পুলিশ কাজ করছে। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে এবং পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।