ছাত্র আন্দোলনে হামলার নির্দেশদাতা সেই এএসপির পদোন্নতি

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থীসহ কিছু সাংবাদিক আহত হয়—এই ঘটনার মূল নির্দেশদাতার সরকারি পদোন্নতি নিয়ে তীব্র সরব প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গত বছরের ১১ জুলাই বিকাল সোয়া ৩টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করার উদ্দেশ্যে রাস্তায় নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আনসার ক্যাম্প সংলগ্ন স্থানে ওইদিনই পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ সংঘটিত হয় এবং ওই ঘটনার সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন 당시 কুমিল্লা সদর দক্ষিণ সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার এ কে এম এমরানুল হক মারুফ (A K M Emranul Haque Maruf)।

জুলাই আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের ওপর করা এই হামলা ছিল দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বলা হয় এমন এক ঘটনার অংশ। ঘটনার পর শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘কুমিল্লায় হামলা কেন? প্রশাসন জবাব চায়’ স্লোগান দেয়। হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তখনকার এএসপি এ কে এম এমরানুল হক মারুফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিদিন এভাবে রাস্তা ব্লক করে রাখা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। তাই আজ শিক্ষার্থীদের বাধা দিতে আমরা এখানে এসেছি। শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। এ বিষয়ে আমরা পরে ব্যবস্থা নেব।’

তবে গত ৮ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখার একটি বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, তাকে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ (Dhaka Metropolitan Police)-এ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এই পদোন্নতির খবর সামনে আসার পর আন্দোলনকারীরা এবং মানবাধিকার সমর্থকরা তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

প্রতিবাদ ও অভিযোগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুবির সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (Bangladesh Ganotantrik Chhatra Songshad)-এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন মুহাম্মদ রুবেল বলেন, ‘১১ জুলাই সর্বপ্রথম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। এই হামলার মধ্যে একজন পুলিশের সদস্য ছিলেন এ কে এম এমরানুল হক মারুফ। সে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল এবং শিক্ষার্থীদের নির্মমভাবে পিটিয়েছিল। রক্তের দাগ শুকানোর আগেই হামলাকারী পুলিশ কর্মকর্তার পদোন্নতির ঘটনায় আমরা গভীর ক্ষোভ ও তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

রুবেল বলেন, ‘জনগণের ওপর হামলা, গুলি চালানো, নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত একজন কর্মকর্তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করা শুধু অন্যায় নয়, বরং ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও সুশাসনের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ। এই পদোন্নতি প্রমাণ করে রাষ্ট্র এখনও জনগণের পাশে নেই, বরং দমন-নিপীড়নকারী শক্তির পাশে দাঁড়াচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই—অবিলম্বে এ ধরনের অন্যায় পদোন্নতি বাতিল করতে হবে এবং জনগণের ওপর হামলা ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। অন্যথায় আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আরও কঠোর আন্দোলনের পথে নামতে বাধ্য হবো।’

ঘটনার সময় পুলিশের রাবার বুলেট চোখে লাগার কারণে কুবির অর্থনীতি ১৫ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী রায়হানও আহত হন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘যেই এএসপির নির্দেশে নির্দোষ শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা চালানো হয়েছিল, তাকে শাস্তির আওতায় না এনে উল্টো পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা চাই, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে শাস্তির আওতায় আনা হোক।’

বার্তা মতে, ওই সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থীসহ কয়েক জন সাংবাদিক আহত হন। ঘটনার পর থেকেই স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে এই পদোন্নতি নিয়ে বিতর্ক ও রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে। সরকার বা সংশ্লিষ্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (Ministry of Home Affairs) থেকে এ বিষয়ে পৃথক কোনো বিবৃতি এখনও সামনে আসেনি—তবে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে পদোন্নতির তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *