ফেনীর পরশুরামের ঐতিহ্যবাহী খন্ডল মিষ্টি (Khondol Sweet) এখন ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই (Geographical Indication) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির অপেক্ষায় রয়েছে। সুস্বাদু এই মিষ্টির যাত্রা শুরু হয়েছিল সত্তরের দশকে, আর নব্বইয়ের দশকেই তা দেশজুড়ে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করে।
মিষ্টির ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া (Begum Khaleda Zia) পরশুরাম সফরে এসে খন্ডল মিষ্টির স্বাদ গ্রহণ করেন এবং প্রকাশ্যে এর প্রশংসা করেন। সেই স্মৃতিই আজও স্থানীয় মানুষের কাছে গর্বের বিষয়। বর্তমানে কবির আহমদের ছেলে ও মিষ্টির স্বত্বাধিকারী মো. বেলাল হোসেন মিষ্টিটির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে জিআই স্বীকৃতির আবেদন জমা দিয়েছেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, খন্ডল হাই বাজারে প্রতিষ্ঠিত ‘খন্ডল পাটোয়ারী মিষ্টি মেলা’ থেকেই মূলত এই মিষ্টির উৎপাদন হয়। প্রস্তুত প্রণালীও বিশেষভাবে ঐতিহ্যবাহী—১৭ কেজি গরুর দুধ থেকে প্রায় ২ কেজি ছানা তৈরি করা হয়। শুকনো ছানার সঙ্গে সামান্য ময়দা মিশিয়ে মন্ড তৈরি করা হয়, এরপর ৫ কেজি চিনি ও পানি দিয়ে তৈরি সিরায় আধঘণ্টা জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় খন্ডল মিষ্টি। গরুর দুধের ছানা থেকে তৈরি হওয়ায় এটি মূলত রসগোল্লার ভিন্ন এক সংস্করণ।
এই সুস্বাদু মিষ্টি প্রথম তৈরি হয় পরশুরাম উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের খন্ডল হাই বাজারে। কবির আহমদ পাটোয়ারী ও মিষ্টির কারিগর যোগল চন্দ্র দাস মিলে সত্তরের দশকে শুরু করেছিলেন এর উৎপাদন। বাজারের নাম থেকেই মিষ্টির নামকরণ হয় ‘খন্ডল মিষ্টি’। বর্তমানে শুধু দেশে নয়, বিদেশেও এর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে।
তবে আশঙ্কার জায়গা রয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে খন্ডল মিষ্টির নামে নকল মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে, যা ঐতিহ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। বেলাল হোসেন বিশ্বাস করেন, সরকারিভাবে জিআই স্বীকৃতি পেলে এই ঐতিহ্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম (Saiful Islam) বলেন, “ঐতিহ্যবাহী খন্ডল মিষ্টির জিআই স্বীকৃতির জন্য আমরা ইতিমধ্যেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। একটি ভালো পণ্য শুধু একটি স্থানকেই টিকিয়ে রাখে না, বরং তা পরিচিতি বহুগুণে বাড়ায়। পাশাপাশি পরশুরামের আখের গুড়কেও জিআই স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি।”