জুলাই বিপ্লবের শেষ মুহূর্তে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) দেশ ত্যাগ করার পরপরই তার ব্যবহার করা চারটি মোবাইল ফোন নম্বর থেকে সংগৃহীত কয়েক হাজার কল রেকর্ড এবং নানান ধরনের ফুটেজ মুছে ফেলে জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (National Telecommunication Monitoring Centre – NTMC)। এনটিএমসির মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান (Ziaul Ahsan)-এর নির্দেশে এ ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, ওই ফোনগুলোর মালিকানার তথ্যও মুছে ফেলেন হাসিনার ঘনিষ্ঠ অনুগতরা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা (Tanvir Hasan Zoha) জানান, ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় এনটিএমসি সদস্যরা নিজেদের জিম্মায় নিয়ে এসব কল রেকর্ড মুছে ফেলে। তবে তিনি বলেন, আইটি বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ধ্বংস করা তথ্য উদ্ধার করা হচ্ছে।
জোহা আরও জানান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর কাছে পাঠানো স্পর্শকাতর বার্তাগুলোও এনটিএমসির সদস্যরা সরিয়ে নিয়েছে। এসব কল রেকর্ড মুছে ফেলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণও মিলছে। তদন্তকারীরা বিশ্বাস করেন, এসব আলামত উদ্ধার করা গেলে শেখ হাসিনার সঙ্গে জড়িত বহু সম্পর্ক ও যোগাযোগের চিত্র উন্মোচিত হবে।
এদিকে মামলার আরেক তদন্তকারী কর্মকর্তা আলমগীর গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে জানান, জুলাই গণআন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার নির্দেশে সারা দেশে তিন লাখ রাউন্ডেরও বেশি গুলি ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে শুধু ঢাকায় পুলিশ ব্যবহার করে প্রায় এক লাখ রাউন্ড গুলি। তদন্তকালে বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে প্রাপ্ত একটি সরকারি চিঠির ভিত্তিতে তিনি বলেন, অস্ত্র ও গুলির ব্যবহার নিয়ে ২২৫ পৃষ্ঠার বিস্তারিত প্রতিবেদন তাদের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, ঢাকায় একাই ব্যবহৃত হয়েছে ৯৫ হাজার ৩১৩ রাউন্ড গুলি এবং সারা দেশে ব্যবহার হয়েছে তিন লাখ পাঁচ হাজার ৩১১ রাউন্ড। এসব অভিযানে এলএমজি, এসএমজি, চাইনিজ রাইফেল, শটগান, রিভলবার, পিস্তলসহ বিভিন্ন মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়।
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা এ মামলায় আলমগীর ছিলেন ৫৪তম এবং শেষ সাক্ষী। জবানবন্দির শুরুতেই জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শিত হয়। একইসঙ্গে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয় শেখ হাসিনার নানা কটূক্তি সংবলিত পত্রিকা কাটিং। এর মধ্যে বিশেষভাবে আলোচিত ছিল গত বছরের ১৪ জুলাইয়ের সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ আখ্যা দেওয়ার ঘটনা। এছাড়া দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন সময়ের ৫৪টি প্রতিবেদনও মামলার আলামত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
সোমবার ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষে শুনানি পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামিম। তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান, ফারুক আহাম্মদ, তানভীর হাসান জোহাসহ আরও অনেকে। এর আগে প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনার ৬৯টি অডিও ক্লিপ এবং তিনটি মোবাইল নম্বরের সিডিআর (কল ডিটেইল রেকর্ড) জব্দ করা হয়েছে, যা মামলার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে সংরক্ষিত আছে।