কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার আইনজীবী ও রাজনীতিক ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী (Barrister Sohrab Khan Chowdhury) দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি একাধিকবার আবেদন করলেও মনোনয়ন পাননি। অবশেষে গত ৫ আগস্ট মনোভাব পরিবর্তন করে কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ফেরার ঘোষণা দেন তিনি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৪ সাল থেকে টানা তিনবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন সোহরাব খান চৌধুরী। এমনকি গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক সমর্থন নিয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন। অথচ এবার তিনি নিজস্ব উদ্যোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নেমেছেন।
ইতিমধ্যে তিনি ব্যানার-ফেস্টুন টানিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মরহুম আব্দুল মতিন খসরু (Abdul Matin Khasru) এবং বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি মরহুম অধ্যাপক মো. ইউনুস-এর ছবি একসঙ্গে ব্যবহার করেছেন। একই ফেস্টুনে তার নিজের ছবিও যোগ করেছেন তিনি। এই অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ স্থানীয় রাজনীতিতে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, গত ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা একজন ব্যক্তির হঠাৎ স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া এবং বিএনপি নেতার ছবি ব্যবহার করা কতটা গ্রহণযোগ্য। বিশেষ করে স্থানীয়রা উল্লেখ করছেন, গত উপজেলা নির্বাচনে তিনি দলীয় প্রতীকের ছায়ায় লড়েছিলেন, আর এবার মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দলীয় সীমারেখা অতিক্রম করে নতুন কৌশল নিচ্ছেন।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এনায়েত করিম ভুঁইয়া এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী মূলত আওয়ামী লীগের লোক। অথচ তিনি আমাদের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. ইউনুছ-এর ছবি ব্যবহার করছেন। এই বিষয়টি নিয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী জসীম উদ্দিন কথা বলবেন।” তার বক্তব্যে স্পষ্ট অভিযোগ—আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ একজন ব্যক্তি কীভাবে বিএনপির নেতার ছবি নিজের নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, “আমার মতামত আমি যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেছি।” তার ভাষ্য, রাজনীতির বর্তমান অবস্থা প্রতিহিংসার শৃঙ্খলে আটকে আছে। তিনি পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, “জাতীয় বা কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশে স্থানীয় নেতাদের ছবি থাকলেই কি তার রাজনৈতিক পরিচয় বদলে যায়? প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসংখ্য ছবি ঘুরছে, যেখানে স্থানীয় নেতারা জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আছেন। সেসব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না। অথচ আমার ক্ষেত্রেই কেন এত ব্যতিক্রম?”
তার এই ব্যাখ্যা বিতর্ককে প্রশমিত করতে পারেনি, বরং স্থানীয় রাজনীতির মাঠে নতুন এক ধরণের জটিলতার জন্ম দিয়েছে।