আ‘লীগ নিষিদ্ধ ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল: শফিকুল ইসলাম মাসুদ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ (Shafiqul Islam Masud) তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। তার অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়নি, বরং শুধু কার্যক্রম স্থগিত—এই বক্তব্য পুরো জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা-৫ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত ছাত্র প্রতিনিধি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, সরকার যদি আওয়ামী লীগকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ না-ও করে, জনগণ ৫ আগস্ট দলটিকে গণহত্যাকারী সংগঠন হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে। পৃথিবীর কোথাও গণহত্যাকারী রাজনৈতিক শক্তি জনগণের কাছে পুনরায় ফিরে আসতে পারেনি, আওয়ামী লীগও পারবে না। যারা এই দলকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে, জনগণ তাদের প্রতিহত করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালিয়ে দুই হাজারেরও বেশি মানুষকে শহীদ করেছে, ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে আহত ও পঙ্গু করেছে। গত ১৫ বছরে তারা দেশজুড়ে জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে, মানুষকে খুন ও গুম করেছে, নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাই এ দলকে রাজনৈতিক দল নয়, বরং গণহত্যাকারী দল হিসেবে অভিহিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলের কাজ হত্যা বা দমন নয়; বরং জামায়াতে ইসলামীর মতো জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আপোষহীন সংগ্রাম চালানো।

শফিকুল ইসলাম মাসুদ দাবি করেন, আওয়ামী লীগের শোষণ থেকে মুক্তির জন্য জনগণ জুলাই বিপ্লব সংঘটিত করেছে। সেই বিপ্লবে হাজারো ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছে। তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিপ্লবকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র হলে জনগণ নিশ্চুপ থাকবে না। দেশি-বিদেশি নানা মহলের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রস্তুত থাকার আহ্বানও জানান তিনি।

সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম (Nurul Islam Saddam)। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে থেকে ২৪ জুলাই আন্দোলন পর্যন্ত ৫৪ বছরে দেশের মানুষ অধিকার আদায়ের জন্য বারবার রক্ত দিয়েছে। স্বাধীনতার প্রকৃত চেতনা—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার—কে পাশ কাটিয়ে শেখ মুজিব রক্ষীবাহিনী গঠন করেছিলেন ক্ষমতার লোভে, আর তাতে নিরীহ মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। তার দুর্নীতি-লুটপাট ১৯৭৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের জন্ম দেয়।

একই ধারায় তার কন্যা শেখ হাসিনাকেও অভিযুক্ত করেন সাদ্দাম। তার মতে, ফ্যাসিবাদী শাসক হাসিনা গত ১৫ বছরে গোটা দেশকে কারাগারে পরিণত করেছেন এবং হাজার হাজার ছাত্র, শিক্ষক, ইমাম, আলেম-ওলামাকে হত্যা করেছেন। সেই দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজের নেতৃত্বে জাতি রাজপথে নেমে আসে এবং অবশেষে জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে হাসিনার পতন ঘটে।

ছাত্র উপদেষ্টাদের উদ্দেশে ক্ষোভ প্রকাশ করে নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, তারা উপদেষ্টা হলেও জুলাই যোদ্ধাদের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের উপদেষ্টা পদে থাকার নৈতিকতা নেই। বিপ্লবের উদ্দেশ্য ছিল জনগণের অধিকার আদায়, কিন্তু উপদেষ্টা পদে বসে বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য নয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *