গণ অধিকার পরিষদ (Gon Odhikar Parishad)-এর সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির অন্য দলের মধ্যে নিজেদের কর্মী নিক্ষেপ না করার নীতি সংস্কার করা উচিত। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, জামায়াত-শিবিরের এই রাজনৈতিক কৌশলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার নিজ সংগঠন ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে রাশেদ খান বলেন, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে জামায়াত ও শিবিরের রাজনীতি মধ্যপন্থী হয়েই চলছে। তিনি বলেন, ‘জামায়াত এবং শিবিরের অন্যদলে নিজেদের কর্মী যুক্ত করার রাজনীতির নীতি বন্ধ করতে হবে। সাম্প্রতিককালে এই নীতির কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গণ অধিকার পরিষদ ও এনসিপি।’
রাশেদ খান আরও জানান, তরুণদের সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও এই দুই সংগঠন শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলে নয়, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যেও পরিচয় গোপন রেখে নিজেদের লোক যুক্ত করছে। এর ফলে ওই সংগঠনের স্বতঃস্ফূর্ত এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দলের ভেতরে সন্দেহ-সংশয় তৈরি হচ্ছে; বিভিন্ন দলের কর্মীদের মধ্যে অবিশ্বাসের সঞ্চার ঘটেছে।’
প্রধান উপদেষ্টা প্রসঙ্গে পোস্টে গোলাম মাওলা রনি সম্পর্কে তিনি উল্লেখ করেন, দেশে আর কোনোদিন ইন্টারনেট বন্ধ হবে না; মানুষ অবাধ তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত থাকবে—এই ধারণা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)-এর আমলে থেকেই প্রচলিত। নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে স্টারলিংক (Starlink)–এর মতো মহাকাশভিত্তিক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং বিশ্বের ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কের (Elon Musk) কোম্পানি স্পেসএক্স (SpaceX) পরিচালিত স্টারলিংককে দ্রুত বাংলাদেশে ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তিনি লেখেন। বর্তমানে সেটা কার্যকরভাবে চালু রয়েছে বলে তিনি দাবিও করেন। তাই, যদি সরকার কোনোভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তা এ ধরণের বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে মানানসই হবে না—এমনটা তার যুক্তি।
রাশেদ খান নেতৃত্বর কথাবার্তার প্রসঙ্গে আরও লিখেছেন, শেখ হাসিনার বক্তব্যে উঠে এসেছে যে আওয়ামী লীগের ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে; হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেবেন ও ‘এক চুলও ছাড় দেয়া হবে না’—এধরনের প্রতিশ্রুটি তিনি প্রতিহিংসামূলক স্বরূপ বলছেন। এই ধরনের বক্তব্য শুনে তাঁর দলের কিছু নেতাকর্মী প্রতিক্রিয়ায় বলছেন, ‘এরকমই নেতা দরকার’—যারা শক্তিশালী সিদ্ধান্ত নেবেন। রাশেদ খান বলেন, এই ধরনের ভঙ্গি ও বক্তব্য সরকার পক্ষ থেকেই উৎসাহিত হচ্ছে বলে তিনি অনুভব করছেন।
পাশাপাশি তিনি দেশের রাজনীতি সহজ—সহজ কোন বস্তু নয়, গ্রামীণ ব্যাংক কিংবা গ্রামীণ টেলিকম পরিচালনার মতো নয়—এমন সতর্কতাও দিয়েছেন। কূটনীতি এবং রাজনীতি দীর্ঘমেয়াদি ও ঝুঁকিপূর্ণ; এখানে ‘এক-মাস’ বা ‘এক-বছর’ অপেক্ষাকারী ব্যবসা নয়, তিনি বলেন। সে প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন, কয়েক মাস আগে কিছু ভারতীয় রাজনীতিবিদ বলেছিলেন শেখ হাসিনাকে দেশে পাঠিয়ে বিচার করা হোক—কিন্তু এখন সেই সুর নেই, বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আরও এক আলাদা পোস্টে, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি (Bangladesh National Party-BJP)-র সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান (Barrister Andalib Rahman) ভোট সংক্রান্ত একটি আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশে সবাই তাদের নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে—এটি নিশ্চিত করা প্রত্যেকের দায়িত্ব। একই সঙ্গে ভোটের প্রস্তুতি ও প্রচারণায় ‘আল্লাহকে নারাজ করা যাবে না’—এই বার্তাও তিনি ব্যক্ত করেছেন। শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া পোস্টে আন্দালিব লিখেছেন, ‘ভোটের জন্য আল্লাহকে নারাজ করো না, পরে আল্লাহকেও পাবা না আর ভোটও কাজে আসবে না।’
রাশেদ খানের উদ্বেগ মূলত রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে পরিচয়াতীতভাবে সদস্যস্থান ও প্রভাব বিস্তারের কৌশলকে কেন্দ্র করে; তিনি সতর্ক করেছেন যে এর ফলে রাজনৈতিক প্লাটফর্মের অভ্যন্তরে বিভ্রান্তি, আস্থা হ্রাস এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে। অন্যদিকে, দেশব্যাপী ইন্টারনেট পরিবহন ও স্যাটেলাইটভিত্তিক সংযোগ বিষয়ে তিনি প্রযুক্তিগত মুক্তিবাদের পক্ষে অবস্থান রেখেছেন—তথ্যপ্রাপ্তির স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা তিনি জোর দিয়ে তুলে ধরেছেন।