সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizens Party)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (Nahid Islam) নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আঁতাত করার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলছিলেন, এসব উপদেষ্টা নিজেদের ‘সেফ এক্সিট’ নিশ্চিত করার জন্য লিয়াজোঁ তৈরি করছেন এবং তাদের ওপর বিশ্বাস রাখা ভুল ছিল — আইনের আওতায় তদন্তের দাবি করেছেন এবং সময় এলে ওই ব্যক্তিদের নাম উন্মুক্ত করবেন বলে জানিয়েছেন।
এই বিবৃতির প্রেক্ষিতে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল (Masud Kamal) কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। রবিবার (৫ অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেল কথা (Kotha)-তে প্রকাশিত এক ভিডিও আলোচনায় তিনি বলেন, নাহিদ ইসলামের অভিযোগগুলো যদি সত্যি হয়, তদন্ত জরুরি; কিন্তু যারা তদন্ত করবে, তারা কি নিজেদের থেকেই দুর্নীতির অভিযোগে মুক্তি পাবে না? তাই তদন্তকারীর চয়ন ও স্বচ্ছতা সম্পর্কে প্রশ্ন করে তিনি এ ঘটনাকে পক্ষে–বিপক্ষে বসে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান।
মাসুদ কামাল বলেন, গত দুদিন ধরে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে নাহিদ ইসলামের বক্তব্য দেখছেন এবং এ নিয়ে নানা গণমাধ্যমে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। তবে নিজের পর্যবেক্ষণে তিনি আতঙ্ক ও হতাশার কথাই তুলে ধরেন। নাহিদ ইসলামের কথার মূল সারমর্ম—দুর্নীতি হয়েছে, বহু ক্ষেত্রেই দুর্নীতির তথ্য রয়েছে, উপদেষ্টারা, রাজনৈতিক নেতারা, প্রশাসনিক স্তর—সব অংশেই অনিয়ম হয়েছে; তাই ইনভেস্টিগেশন হওয়া উচিত। কিন্তু তিনি প্রশ্ন করে বলেন, যারা তদন্ত করবে তারা তো নিজেই দুর্নীতিতে আশ্ৰিত থাকতে পারেন—তাহলে কীভাবে সুষ্ঠু তদন্ত হবে?
ভিডিওতে মাসুদ কামাল নাহিদ ইসলামের আরও এক দাবি তুলে ধরেন—কয়েকজন উপদেষ্টার নাম তিনি শিগগিরই প্রকাশ করবেন এবং উল্লেখ করেন যে এসব উপদেষ্টা গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন, নিজেদের আখেরে গুছিয়েছেন। মাসুদ বলেন, যদি নাহিদ ইসলামের কাছে প্রকৃত তথ্য ও নাম থাকে, তাহলে এখনই প্রকাশ করার কোনো কারণ নেই বললে তিনি সন্দেহ করবেন। নাহিদ কেন এখন নাম প্রকাশ করছেন না—এই প্রশ্নের পেছনে তিনি কয়েকটি সম্ভাব্য উদ্দেশ্য টানান; হয়তো নাহিদদের সঙ্গে কোনো দরকষাকষি চলছে, হয়তো তারা পারস্পরিক লেনদেনে লিপ্ত, অথবা ব্যক্তি-স্বার্থের জন্য নাম গোপন রাখা হচ্ছে—এসব প্রশ্নই তার বক্তব্যে কেন্দ্রীয় হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি বলেন, নাহিদ যখন নিজে উপদেষ্টা ছিলেন, তখন তিনি উপদেষ্টাদের কর্মকাণ্ড ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছেন; সেই অভিজ্ঞতা যদি সত্যিই থাকে, তাহলে জনগণের সঙ্গে এ তথ্য শেয়ার করা তাঁর দায়িত্ব। নাম না জানালে জনগণ কিভাবে বিশ্বাস করবে—আর বিরতির সুযোগ পেলে অভিযুক্তরা নিজেদের রক্ষা করতে পারবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। মাসুদ আরো যোগ করেন, যদি নাহিদ বাস্তবে নাম বলতে না পারেন, তবে তিনি নিজে এগিয়ে এসে এসব নাম প্রকাশ করবেন এবং সেক্ষেত্রে ঘোষণা করেছেন—সেসকল ব্যক্তি তিনি ‘বোগাস’ বলে অভিহিত করবেন; শব্দটা ব্যবহার করে তিনি নাহিদকে ‘ভুয়া’ আখ্যা দিয়েছেন।
মাসুদ কড়া টোনে বলেন, নাহিদকে তিনি সাত দিনের মধ্যে নাম বলার চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন। উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে যদি নাম বলতে না পারেন, তাহলে তিনি পাবলিকলি নাহিদকে ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করবেন। চ্যালেঞ্জের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মাসুদ বলেন—নাহিদ জনসম্মুখে এমন গুরুতর অভিযোগ করেছেন; সেই অভিযোগের পেছনে যদি স্পষ্ট প্রমাণ না থাকে, তাহলে জনগণের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করা উচিত নয়। তিনি সরাসরি অনুরোধ করেন—নাহিদ নাম বলুন, নাহিদ যদি জানেন না, সে কথাও পরিষ্কার করে বলুক, তা না হলে জনবিশ্বাসের প্রশ্ন ওঠে।
ভিডিওতে মাসুদ আরো প্রশ্ন তুলেছেন—ইনভেস্টিগেশন হলে কীভাবে সমন্বয় হবে, তদন্তকারীরা কে হবেন, এবং যদি ওই উপদেষ্টাদেরই নিজেদের উপর তদন্তের দায়িত্ব আরোপ করা হয় তাহলে ফলাফল কতটা গ্রহণযোগ্য হবে। তিনি বলেন, এই সব বিষয় সমাধান না করে কেবল অভিযোগ করে রাখলে দেশ এবং জনগণের সামনে বিভ্রান্তি বাড়বে; দায়সারা বক্তব্য দেবার বিপক্ষে তিনি সাফ কথা বলেন।
সংক্ষিপ্তভাবে—নাহিদ ইসলামের করা অভিযোগ ও নাম প্রকাশের প্রতিশ্রুতি রাজনৈতিক মহলে নাড়া দিয়েছে, আর এই অভিযোগের ওপর সন্দেহপ্রকাশ করে এবং সাতদিনের মেয়াদে নাম জানানোর দাবিতে মাসুদ কামাল (Masud Kamal) প্রতিশ্রুতিবদ্ধভাবে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন যে, যদি নাম না জানানো হয় তিনি প্রকাশ্যে নাহিদকে ভুয়া ঘোষণা করবেন। এই ইস্যু ভবিষ্যতে রাজনৈতিক আলোচনা এবং গণমাধ্যমের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা অবধি বিতর্ক অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।