রাষ্ট্রনায়কের মতো সংযত ও দূরদর্শী বক্তব্য দিয়েছেন তারেক রহমান : মাসুদ কামাল

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)-এর একটি সাক্ষাৎকার আজ সকালে বিবিসি বাংলা (BBC Bangla)-তে প্রচারিত হয়েছে। এটি ছিল সাক্ষাৎকারের আংশিক অংশ; বাকি অংশটি প্রচারিত হবে আগামীকাল। সোমবার (৬ অক্টোবর) প্রচারিত এই অংশটি নিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল (Masud Kamal) তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে বিশদ বিশ্লেষণ করেছেন।

মাসুদ কামাল বলেন, “এই সাক্ষাৎকারে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে, যা শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং দার্শনিক ও নৈতিক প্রশ্নেরও জন্ম দেয়। তারেক রহমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন, কিন্তু সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল তাঁর বক্তব্য—‘এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ।’ এই মন্তব্য অসাধারণ, কারণ তিনি স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন যে আন্দোলনের পেছনে কোনো একক নেতা নয়, বরং জনগণই ছিল মূল চালিকা শক্তি।”

ডাকসু রাজনীতি ও জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব
ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে তারেক রহমানের মন্তব্য নিয়ে মাসুদ কামাল বলেন, “তিনি বলেছেন ডাকসু নির্বাচনের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে না—আমি তাঁর সঙ্গে একমত।” তবে তিনি যোগ করেন, “ইতিহাসে কিছু ব্যতিক্রম ছিল, যেমন আমান খোকন (Aman Khokon)-এর ডাকসু বিজয় ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছিল। তখন তরুণ ভোটাররাই বিএনপিকে জিতিয়েছিল, আর ২০০১ সালেও সেই তরুণদের ভোট বিএনপির পক্ষেই গিয়েছিল।”

আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে সংযত মন্তব্য
আওয়ামী লীগ নিয়ে তারেক রহমানের মন্তব্যকে মাসুদ কামাল আখ্যা দেন ‘অত্যন্ত ঠান্ডা মাথার, পরিমিত ও সংযত।’ তাঁর ভাষায়, “তারেক রহমান নিজের ১৭ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাস এমনভাবে বর্ণনা করেছেন, যা হৃদয় স্পর্শ করে। মা, ভাই, পরিবার, স্মৃতি—সবকিছুর ওপর দিয়ে যে নির্যাতন গেছে, তা তিনি সংযমী ভাষায় বলেছেন। তাঁর বক্তব্যে কোনো ক্রোধ নেই, আছে মমতা ও পরিমিতি বোধ। তাঁর কথা শুনে আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল।”

তিনি আরও বলেন, “সবচেয়ে বড় কথা, তিনি ব্যক্তিগত প্রতিশোধের কথা বলেননি। বলেছেন—‘সমস্ত অপরাধের বিচার হতে হবে, তবে এটি প্রতিশোধের নয়, এটি ন্যায়ের প্রশ্ন।’ রাষ্ট্রনায়কসুলভ বক্তব্য বলতে যা বোঝায়, এটাই তাই।”

দীর্ঘ ১৭ বছরের ইতিহাস ও আন্দোলনের ধারাবাহিকতা
মাসুদ কামাল আরও মন্তব্য করেন, “তারেক রহমান স্পষ্ট করে বলেছেন—আওয়ামী লীগের অন্যায় শুধু জুলাই মাসে সীমাবদ্ধ নয়; গত ১৫ বছর ধরে যে দুঃশাসন চলেছে, তারও বিচার হতে হবে। এই ১৭ বছরের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি প্রমাণ করেছেন, বিএনপির আন্দোলন হঠাৎ জন্ম নেয়নি, বরং দীর্ঘকালীন অন্যায়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবেই গড়ে উঠেছে।”

দল নিষিদ্ধ নয়, আইনের শাসন চেয়েছেন তিনি
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গে তারেক রহমানের অবস্থান নিয়েও কথা বলেন মাসুদ কামাল। তিনি বলেন, “তারেক রহমান অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন। বলেছেন—‘যদি দল হিসেবে তারা অন্যায় করে থাকে, তাহলে দেশের আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে।’ তিনি নিষিদ্ধের কথা বলেননি; বলেছেন আইনের শাসনের কথা—এটাই তাঁর পরিণত রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি।”

জনগণের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর
মাসুদ কামালের মতে, “তারেক রহমান যেভাবে দায় জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, ‘যে দল বা ব্যক্তি মানুষ হত্যা করে, খুন-গুম করে, দেশের সম্পদ লুট করে—জনগণ তাদের সমর্থন করতে পারে বলে আমি মনে করি না।’ এই বক্তব্যে তিনি শুধু আওয়ামী লীগের অন্যায়ের বিচার চেয়েছেন তা নয়, জনগণকেও নৈতিক বিচারের আসনে বসিয়েছেন।”

দেশে ফেরার ঘোষণা ও আশাব্যঞ্জক বার্তা
তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়েও মন্তব্য করেন মাসুদ কামাল। তিনি বলেন, “তারেক রহমান একাধিকবার বলেছেন—‘আমি খুব শিগগিরই ফিরব, ইনশাআল্লাহ। নির্বাচনের প্রচারণার সময় থাকব।’ এটি একটি ইতিবাচক বার্তা এবং বিএনপির জন্য নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক সংকেত।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *