আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT)–এ কারও বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলে তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার বা থাকার সুযোগ পাবেন না—এমনই স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয় (Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs)। সোমবার (৬ অক্টোবর) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শাখা থেকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (ICT) আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিম্নলিখিত দায়িত্ব পালনে অযোগ্য বিবেচিত হবেন—জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা থাকা, স্থানীয় সরকার সংস্থাসমূহের সদস্য, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক হিসেবে নির্বাচিত বা নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়া কিংবা থাকা, প্রজাতন্ত্রের কোনো চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়া এবং অন্য কোনো সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হওয়া।
অর্থাৎ, আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গেই ব্যক্তি তার সকল সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক যোগ্যতা হারাবেন। আইনের এই ধারা কার্যকর হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি আর প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে পারবেন না কোনো নির্বাচনে, এমনকি সরকারি কোনো দপ্তরেও নিযুক্ত হতে পারবেন না।
তবে প্রজ্ঞাপনে আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, “উপধারা (১) এ যা কিছুই থাকুক না কেন, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক কোনো ব্যক্তি অব্যাহতি বা খালাসপ্রাপ্ত হলে, উক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হইবে না।” অর্থাৎ, যদি কোনো ব্যক্তি পরবর্তীতে আদালত কর্তৃক নির্দোষ বলে বিবেচিত হন, তবে তাঁর ওপর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা স্বয়ংক্রিয়ভাবে উঠে যাবে।
এই সিদ্ধান্তটি এমন এক সময়ে এলো যখন যুদ্ধাপরাধের বিচার ও বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা আলোচনা চলছে। বিশেষ করে অতীতে কিছু আলোচিত মামলায় অভিযুক্তদের সংসদ সদস্য থাকার বিষয়টি বিতর্ক তৈরি করেছিল। সেই প্রেক্ষাপটেই আইন মন্ত্রণালয়ের এই স্পষ্টীকরণ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত আইনি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। একই সঙ্গে এটি প্রমাণ করে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তরা আর রাষ্ট্রীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকতে পারবেন না, যতক্ষণ না আদালত তাঁদের নির্দোষ প্রমাণ করে।