তিন যুগ ধরে বুকের পেশি দিয়ে গরু কিংবা মেশিন ছাড়া নিজেই টেনে চলা ঘানির চাকা—এই একটিমাত্র ভরসায় সংসার চালিয়েছেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মোস্তাকিন আলী। বয়স এখন ৫৬, তবে জীবনের প্রতিটি ধাপে ছিল কেবলই লড়াই, শ্রম আর আত্মত্যাগ। পাশে ছিলেন স্ত্রী ছকিনা বেগম, যিনি একইভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন জীবনের সঙ্গে।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে এই কঠিন জীবনের করুণ চিত্র উঠে আসার পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আলোড়ন। অসংখ্য মানুষ সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন তারেক রহমান (Tareque Rahman)—বিএনপির (BNP) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, যিনি প্রমাণ করলেন, রাজনীতি মানে কেবল বক্তৃতা নয়—মানবতার পাশে দাঁড়ানোই প্রকৃত নেতৃত্বের পরিচয়।
বুধবার (৮ অক্টোবর) জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুর গফুর সরকার জানান, সংবাদটি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তারেক রহমান দ্রুত সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দেন। নেতার স্পষ্ট বার্তা ছিল, “এই সংগ্রামী মানুষটির পাশে এখনই দাঁড়াতে হবে।” তার নির্দেশে বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জে যাচ্ছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী (Ruhul Kabir Rizvi) সহ অন্যান্য নেতারা। মোস্তাকিনের হাতে তুলে দেওয়া হবে দুটি অটোরিকশা ও নগদ সহায়তা, যা তার পরিবারকে দেবে নতুন জীবনের গতি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিস ইসলাম বলেন, “পরিশ্রমী ও গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। মোস্তাকিনের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমরা সম্মানিত বোধ করছি।” এই বক্তব্যে স্পষ্ট, রাজনীতির গরিমা তখনই অর্থবহ হয়, যখন তা মানুষের কষ্টে গলে যায় মানবতায়।
অন্যদিকে, সহায়তা পাওয়ার পর আবেগতাড়িত মোস্তাকিন আলী বলেন, “জীবনে কখনো ভাবিনি এমনভাবে পরিবর্তন আসবে। যারা আমাকে সাহায্য করেছেন, আল্লাহ যেন তাদের ভালো রাখেন।” একান্ত কণ্ঠে প্রকাশ পাওয়া এই কৃতজ্ঞতা যেন চোখ ভিজিয়ে দেয় শোনার মানুষকেও।
এছাড়াও স্থানীয় একজন উদ্যোগ নিয়ে মোস্তাকিনের জরাজীর্ণ ছাপড়া ঘরের পাশে একটি টিনের ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন। সেই ঘরের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে একটি বিদ্যুৎচালিত তেলের ঘানি মেশিন—আর কখনোই বুকের বল দিয়ে টানতে হবে না চাকা। এবার মেশিন চালাবে ঘানি, মোস্তাকিন চালাবেন স্বস্তির নিশ্বাস।
তবে শুধু রাজনৈতিক দল নয়, প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এসেছে সহায়তা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চার বান্ডিল টিন, এক মণ সরিষা, নগদ অর্থ এবং খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন মোস্তাকিনকে। সমাজের সব শ্রেণির মানুষের সম্মিলিত সহায়তায়, তিন যুগের লড়াই শেষে আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছেন এই নির্লিপ্ত অথচ সংগ্রামী মানুষটি।
তারেক রহমানের এ উদ্যোগ রাজনীতির পরিধিকে প্রসারিত করেছে হৃদয়ের পরিসরে। যেখানে সংকটে মানুষ, সেখানে তারেক রহমান—এই বার্তাই যেন পৌঁছে গেছে সারা দেশে।