ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপি’র হাতে শরিকদের দেওয়া ২১৭ আসনের তালিকা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় নেমেছে বিএনপি (BNP)। যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে ২১৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা জমা দিয়েছে দলটির কাছে। এর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ ১৩৮, ১২ দলীয় জোট ২১, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ৯, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (LDP) ১৩, জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ৫, গণফোরাম (Gonoforum) ১৫, লেবার পার্টি ৬ এবং জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ১০ আসনে প্রার্থীর নাম দিয়েছে।

তবে কৌশলগত কারণে কিছু মিত্র দল সরাসরি লন্ডনে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)-এর কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা দিয়েছেন। মিত্রদের আসন ছাড় নিয়ে চলছে দরকষাকষি; তবে ধারণা করা হচ্ছে, এবার বিএনপি সর্বোচ্চ ৪০টি আসন ছাড় দিতে পারে।

অতীতের অভিজ্ঞতা ও বর্তমান কৌশল

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি শরিকদের ৫৮ আসন ছেড়েছিল। এবার দলটি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো জোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে অন্য মিত্রদের জনপ্রিয়তা যাচাই করছে বিএনপির একাধিক টিম। শরিকদের মধ্যে যাদের মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হবে না, তাদের সংসদের উচ্চকক্ষে মূল্যায়নের পরিকল্পনাও রয়েছে।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, “স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যে সব দল আমাদের পাশে ছিল, আমরা চাই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “যেসব আসনে শরিকদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি, কেবল সেসব আসনেই প্রার্থী দেওয়া হবে।”

আলোচনার অগ্রগতি ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা

সূত্র জানিয়েছে, চলতি মাসেই জানা যাবে বিএনপি কতটি আসন মিত্রদের ছাড় দেবে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে মৌখিকভাবে নিজ নিজ এলাকায় কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সম্ভাব্য সবুজ সংকেতপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন—পিরোজপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ঢাকা-৬ আসনে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ঢাকা-১৩ আসনে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ঢাকা-১৭ আসনে জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, কুমিল্লা-৭ আসনে এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ ও নড়াইল-২ আসনে এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।

গণতন্ত্র মঞ্চ ও অন্যান্য জোটের অবস্থান

বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চ ১৩৮টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে। তালিকায় আছেন নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, জেএসডির তানিয়া রব, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ূমসহ আরও অনেকে।

১২ দলীয় জোট ২১টি আসন দাবি করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম।

গণফোরাম ১৫ আসনে প্রার্থীর তালিকা প্রস্তুত করেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ডা. মিজানুর রহমান, অ্যাডভোকেট এসএম আলতাফ হোসেন ও রণজিৎ সিকদার।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ৯টি আসন চাইছে। প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের ব্যারিস্টার নাসিম খান।

লেবার পার্টি ৬টি আসনে প্রার্থী চেয়েছে; ঝালকাঠি-১ আসনে দলটির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান মনোনয়ন প্রত্যাশী।

এছাড়া এলডিপি ১৩ জন প্রার্থীর তালিকা সরাসরি লন্ডনে তারেক রহমানের হাতে দিয়েছে। এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ও বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থও তালিকা জমা দিয়েছেন।

এনসিপির সঙ্গে সম্পর্ক ও ভবিষ্যৎ জোট

বিএনপি বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে। এনসিপি’র সাথে কোনো রকম সমঝোতার সম্ভাবনার কথা এখন পর্যন্ত শোনা না গেলেও শেষ পর্যন্ত তাদের সাথে কোনো রকম জোট গঠন হলে বদলে যেতে পারে শরিকদের হিসাব নিকাশ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *