বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সরাসরি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক (Volker Türk)। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, সেনাবাহিনীর আটক কর্মকর্তাদের দ্রুত একটি উপযুক্ত বেসামরিক আদালতে উপস্থাপন করা এখন সময়ের দাবি।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তুর্কের এই মন্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম জোরপূর্বক গুমের ঘটনায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে—যা ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের জন্য এক তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত।
ভলকার তুর্ক বলেন, “ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ফৌজদারি মামলাগুলোর স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। সেনাবাহিনীর স্বতঃস্ফূর্তভাবে আটক এই কর্মকর্তাদের দ্রুত বেসামরিক আদালতে উপস্থাপন করা উচিত। এতে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচারের মান রক্ষা পাবে।”
তিনি আরও বলেন, এসব স্পর্শকাতর মামলার ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। একইসঙ্গে তিনি জোরপূর্বক গুম ও নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারপ্রক্রিয়ার সূচনাকে বাংলাদেশের জবাবদিহির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করেন।
গত বছর শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ চলাকালে সংঘটিত মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় অভিযুক্তদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে জবাবদিহির আওতায় আনার সুপারিশ করেছিল জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও হাইকমিশনার বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে বিপুলসংখ্যক মানবাধিকার সম্পর্কিত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান।
তুর্ক বলেন, “প্রতিটি মামলায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে, যেন ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়। নির্বিচারে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে হবে এবং আদালতে চলমান কোনো মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গঠনমূলক পথ হলো সত্য উদ্ঘাটন, ক্ষতিপূরণ, নিরাময় ও ন্যায়বিচারের সমন্বিত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা। এ প্রক্রিয়াই ব্যক্তিগত জবাবদিহি স্থাপন এবং জাতীয় পুনর্মিলনের পথ প্রশস্ত করবে।
শেষে ভলকার তুর্ক স্পষ্ট বার্তা দেন—“মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘন বা নিপীড়ন যেন আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান উদ্বেগগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনের মানদণ্ড অনুযায়ী মোকাবিলা করার জন্য আমি অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।”