এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া বৃদ্ধির দাবিকে ‘যৌক্তিক’ বলেছেন প্রিন্সিপাল সেলিম ভূঁইয়া (Principal Selim Bhuiyan)। তবে একইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেছেন, এই ন্যায্য আন্দোলনকে ব্যবহার করে কিছু নেতৃত্ব শিক্ষকদের বিভ্রান্ত করছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তাঁর দাবি, আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা কয়েকজন অতীতে আওয়ামী লীগ (Awami League)-এর ঘনিষ্ঠ ছিলেন, আর এখন সেই দলই তাদের মাধ্যমে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করছে এবং “বিশৃঙ্খলা তৈরিতে প্রচুর ফান্ড” দিচ্ছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) নয়াপল্টনে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের কার্যালয়ে এডুকেশন রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (Education Reporters Association, Bangladesh – ইরাব)-এর সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব অভিযোগ করেন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বিএনপি (BNP)-এর সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিন্সিপাল সেলিম ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, “এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন যারা, তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ। আওয়ামী লীগই এখন এই আন্দোলনে ফান্ড দিচ্ছে এবং নিজেদের লোকবলও ঢুকিয়ে দিয়েছে।”
তিনি আরও জানান, ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোট’-এর সদস্যসচিব প্রিন্সিপাল দেলাওয়ার হোসেন আজিজীসহ ধানমণ্ডির একটি স্কুলের আওয়ামীপন্থী নেতারাও এই আন্দোলনে সক্রিয়। সেলিম ভূঁইয়ার অভিযোগ, “এরা অতীতে শেখ মুজিবের ছবি ব্যবহার করে মাঠে কাজ করেছেন, টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে মাজারে মোনাজাত করেছেন, আর আজ তারা শিক্ষকদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পরিষ্কারভাবে বলা যায়, আওয়ামী লীগ এই আন্দোলনকে ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইছে।”
সেলিম ভূঁইয়া আরও দাবি করেন, আন্দোলনের সময়সূচিও নিতান্তই রাজনৈতিকভাবে নির্ধারিত। “এর আগে ১৫ আগস্টের আগে তারা ঢাকায় আন্দোলন করে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করেছে। ধর্মঘটের ডাক দিয়ে ১৫ আগস্টের আগে বিশৃঙ্খলা ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল,”—বলেন তিনি।
তাঁর মতে, সাধারণ শিক্ষকরা হয়তো জানেন না যে তারা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছেন। “একজন শিক্ষক নিজের দাবি নিয়ে রাস্তায় নামছেন, কিন্তু তিনি বুঝতে পারছেন না তাঁর আন্দোলনকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে,” যোগ করেন বিএনপি নেতা।
তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের ইতিহাস রয়েছে। এই দেশে শিক্ষকদের অধিকারের জন্য কাজ করেছে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট ও শিক্ষক ফেডারেশন। তাই পরীক্ষিত নেতৃত্বের দিকেই থাকুন, বিভ্রান্তির মধ্যে যাবেন না।”
সেলিম ভূঁইয়া মনে করিয়ে দেন, দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের নেতা তারেক রহমান ইতিমধ্যেই বলেছেন—বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষকদের সব দাবি পূরণ করা হবে। “তাহলে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠদের পেছনে ঘুরে বেড়ানোর প্রয়োজন কী?”—প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “আমরা শিক্ষামন্ত্রীর উপদেষ্টাকে বলেছি, সব শিক্ষক সংগঠনকে ডেকে বসুন, আলোচনা করুন। মাঠে থাকা শিক্ষকদের জন্য একটি সম্মানজনক সমাধান দিন।”
এই সময় তিনি শিক্ষকদের ওপর পুলিশি হামলা ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানান।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ঐক্যবদ্ধ শিক্ষক-কর্মচারী প্লাটফর্মের আহ্বায়ক মো. জাকির হোসেন, ইরাব সভাপতি ফারুক হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান সালমান এবং সাবেক সভাপতি সাব্বির।