জুলাই সনদে ‘ছাত্র-জনতার সংগ্রামী ইতিহাস’ উপেক্ষিত—এমন অভিযোগ এনে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের এ দলিলের কড়া সমালোচনা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাতে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, সনদে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের আন্দোলনের ইতিহাস বাদ দেওয়ার মাধ্যমে শহীদদের রক্তের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করা হয়েছে।
সংগঠনের সভাপতি রিফাত রশিদের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “১৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত রাষ্ট্রীয় সংস্কারের দলিল—জুলাই সনদ। এতে অন্তর্ভুক্ত ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য থাকলেও, ইতিহাসের বিকৃতি এবং পুনর্লিখনের চেষ্টায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “বিশেষ করে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের জুলাই মাসের ছাত্র-জনতার ধারাবাহিক লড়াই-সংগ্রামের কথা সনদে উল্লেখ করা হয়নি। অথচ এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ফ্যাসিস্ট ও খুনি হাসিনার পলায়ন ঘটেছিল।”
সংগঠনটি দাবি করে, ১ জুলাই ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গঠিত হয়, যা ৯ দফা দাবি থেকে এক দফায় রূপান্তরিত হয়। এই এক দফা ছিল—‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।’ এই দাবি ও অভিপ্রায় থেকেই নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের বুনিয়াদ স্থাপিত হয়েছিল।
“কিন্তু বর্তমানে যে জুলাই সনদ তৈরি হয়েছে, সেখানে সেই বুনিয়াদকে উপেক্ষা করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভিপ্রায়কে বিকৃত করা হয়েছে,”—উল্লেখ করে সংগঠনটি।
তারা আরও অভিযোগ করে, “জুলাইয়ের শহীদ পরিবার, আহত ব্যক্তি ও আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রদের সংস্কার প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসেই রাষ্ট্রের ইতিহাসকে বিলীন করা হয়েছে। অতীতে যেমন, এখনো রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্র-জনতার সঙ্গে প্রতারণা করছে। এই ইতিহাস বিকৃতির পুনরাবৃত্তিকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “আমরা লক্ষ্য করেছি, আইনি ভিত্তি এবং ‘নোট অব ডিসেন্ট’-এর সমাধান ছাড়াই দ্রুত স্বাক্ষরের আয়োজন চলছে। অতীতেও জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে এমন টালবাহানা হয়েছে। সেই ঘোষণার কোনো আইনি বৈধতা আজও নেই। ছাত্র-জনতা আর এ ধরনের কথার ফুলঝুড়িতে বিশ্বাস করে না।”
সবশেষে সংগঠনটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়, জুলাই সনদের স্বাক্ষর কার্যক্রম শুরুর আগে এর আইনি ভিত্তি ও ‘নোট অব ডিসেন্ট’-এর সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, সব রাজনৈতিক দল, শহীদ পরিবার, আহত এবং ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে ছাত্রদের মাধ্যমেই সনদের পূর্ণতা ও বৈধতা নিশ্চিত করতে হবে।