“যারা জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন, তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে”—জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের জবাবে এমনটাই বলেছেন সালাহউদ্দিন আহমদ (Salahuddin Ahmed)। শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর রমনায় অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ–অ্যাব আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
আলোচনায় সালাহউদ্দিন অভিযোগ করেন, সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই যোদ্ধা’ নাম ধারণ করা কিছু ব্যক্তি একটি সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, “এইসব আওয়ামী ফ্যাসিস্ট জুলাই যোদ্ধা নামধারীরা পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, তাদের অনেকেই ছাত্র নামধারী হলেও প্রকৃত জুলাই অভ্যুত্থানকারীদের কেউ নয়। বরং এরা ফ্যাসিস্ট সরকারের ফাঁকফোকরে অনুপ্রবেশকারী। সত্যিকারের জুলাই যোদ্ধারা কখনও বিশৃঙ্খল হবেন না।”
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা মনে করেন, ১৯ জুলাইয়ের শহীদ ও আহতদের প্রতি প্রকৃত সম্মান জানানোর একমাত্র পথ হলো, তাঁদের আদর্শ ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা। তিনি বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন বা আহত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সেরা উপায় তাঁদের স্বপ্ন পূরণে কাজ করা।”
জুলাই সনদ (July Charter) প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, এই দলিল বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য পথনির্দেশক। তাই সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে পথচলার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। একইসঙ্গে অভিযোগ তোলেন, সরকারঘেঁষা কিছু সুবিধাভোগী দল চায় না বিএনপি আবার ক্ষমতায় ফিরুক।
তবে এইসব মন্তব্যের জবাবে সকালেই পাল্টা বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। রাজধানীর বাংলামোটরে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি সালাহউদ্দিন আহমদকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ বলে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন তাঁদের অপমান করেছেন।
এরই জবাবে রমনায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় ফের মুখ খুলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। বলেন, “যাঁরা আমাকে ক্ষমা চাইতে বলেন, তাঁরা অভিজ্ঞতার অভাবে কথা বলেন। আমি তাঁদের রাজনৈতিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের আহ্বান জানাই।”
তিনি আরও বলেন, “আমার বক্তব্যকে অপব্যবহার করা হয়েছে। জুলাই যোদ্ধারা কেন নিজেদের কাঁধে ওই ঘটনার দায় নিচ্ছেন? সত্যিকার অর্থে তাঁদের বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রশ্নই ওঠে না।”
এদিকে সকালেই শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (Ziaur Rahman)-এর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সালাহউদ্দিন। সেখানে তিনি বলেন, “বিশৃঙ্খলার ঘটনাটি তদন্তাধীন। আমরা জেনেছি, কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক ‘জুলাই যোদ্ধা’ নাম ব্যবহার করে ঢুকেছিল। এটি সরকারেরই একটি কৌশল। আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা পরিস্থিতি ঘোলা করতে চায়।”
এই বক্তব্যেই মূলত বিতর্কের সূত্রপাত। পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় এনসিপি নেতা নাহিদের মন্তব্যকে ‘অভিজ্ঞতাহীনতা’ বলে আখ্যা দিয়ে সালাহউদ্দিন বিষয়টি স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছেন।