নড়াইল জেলায় সরকার ঘোষিত জুলাই যোদ্ধাদের তালিকায় উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর নাম—শেখ আশিক বিল্লাহ (Sheikh Ashik Billah)। যিনি একসময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া (Khaleda Zia)-এর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন, সেই ব্যক্তি এবার নিজেকে “জুলাই যোদ্ধা” দাবি করে সরকারি তালিকায় স্থান পেয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড়।
রোববার (১৯ অক্টোবর) সকাল থেকে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আশিক বিল্লাহর নাম প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই নড়াইল জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে বিষয়টি।
কালিয়া উপজেলার যাদবপুর গ্রামের মৃত ওয়াজেদ আলীর ছেলে শেখ আশিক বিল্লাহ স্থানীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন সক্রিয়। একসময় তিনি কালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক ছিলেন। পরে দল পরিবর্তন করে ডেমোক্রেটিক পার্টি ও সর্বশেষ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizen Party)-র সদস্য হিসেবে সক্রিয় রাজনীতি শুরু করেন।
সরকার জুলাই যুদ্ধে আহতদের সহায়তা ও তথ্য সংরক্ষণের জন্য যে তালিকা প্রণয়ন করেছে, তাতে নড়াইল জেলার ২ জন নিহত ও ২৭ জন আহত ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই তালিকার ২২ নম্বরে রয়েছে শেখ আশিক বিল্লাহর নাম। তার গেজেট নম্বর ৩৩৬৯১।
২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বরের দিকে ফিরে গেলে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগে নড়াইলের আদালতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে মানহানির মামলা দায়ের করেছিলেন আশিক বিল্লাহ। একই দিনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (Goyeshwar Chandra Roy)-এর বিরুদ্ধেও আরেকটি মামলা করেছিলেন তিনি।
তবে স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ উঠেছে, আশিক বিল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা অনলাইন প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত। তার ভাই মাওলানা কুদ্দুসের দুই ছেলে অতীতে প্রতারণার অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তবুও আশিক বিল্লাহ এখনও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে বলে জানা গেছে।
কালিয়া উপজেলার পাঁচগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও এনসিপি নেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, “আশিক বিল্লাহ ও বোরহান কবীর দুজনই অনলাইন প্রতারণার গুরু। তিনি নিয়মিত দল বদল করে ক্ষমতার ছায়ায় প্রতারণা চালিয়ে গেছেন। তার নাম তালিকায় কীভাবে এলো, তা প্রশাসনই বলতে পারবে।”
এ বিষয়ে নড়াইল জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম (Bishwas Jahangir Alam) বলেন, “এ জাতীয় সুযোগসন্ধানী মানুষের নাম তালিকায় এলে এর দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে। সঠিক যাচাই-বাছাই ছাড়া এমন নাম তালিকায় ওঠা প্রশাসনের বড় ব্যর্থতা।”
নড়াইলের জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান (Sharmin Akter Jahan) বলেন, “জুলাই যোদ্ধা হিসেবে আহতদের তালিকায় আশিক বিল্লাহর নাম কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হলো, সে বিষয়ে আমার জানা নেই।”
অন্যদিকে নিজেকে ‘প্রকৃত জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করে শেখ আশিক বিল্লাহ বলেন, “আন্দোলনের সময় আমি ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিই এবং আহত হই। আমার চিকিৎসা সনদসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দিয়েই আমি ‘আহত জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে গেজেটে স্থান পেয়েছি।”
এই ঘটনার পর নড়াইলের রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে—সত্যিই কি আশিক বিল্লাহ জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধা, নাকি আবারও রাজনীতির ছায়ায় নতুন পরিচয় তৈরি করেছেন তিনি?