শাপলা চত্বরে গণহত্যার প্রমাণ নেই, হলেও শেখ হাসিনা জানতেন না: আইনজীবীর দাবি

২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ঘিরে কথিত ‘গণহত্যা’র অভিযোগকে নাকচ করেছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন (Md. Amir Hossain)। তার মতে, ঘটনাটি আদৌ গণহত্যা ছিল না। আর যদি নিহত কেউ হয়ে থাকেন, তবুও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সে বিষয়ে অবগত ছিলেন না।

সোমবার (২০ অক্টোবর), আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল (Asaduzzaman Khan Kamal)-এর পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে গিয়ে এসব বক্তব্য দেন তিনি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলের সামনে এই যুক্তিতর্ক পেশ করা হয়।

আইনজীবী আমির হোসেন তার বক্তব্যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মকাণ্ড, শাপলা চত্বরের ঘটনাপ্রবাহ ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রসঙ্গ টানেন। তিনি বলেন, শাপলা চত্বরের ঘটনার দিন তিনি নিজে উপস্থিত ছিলেন এবং হেফাজতের নেতাকর্মীদের সহিংসতা নিজের চোখে দেখেছেন।

তার ভাষায়, “সেদিন তারা পল্টন, বায়তুল মোকাররমসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গাছ কেটে, অফিস-আদালত ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে তাণ্ডব চালায়। করাত, পেট্রোলসহ এসব উপকরণ তারা প্রস্তুত করেই এসেছিল। এ অবস্থায় যদি সরকার সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করে, তাতে অপরাধ কোথায়?”

তিনি আরও বলেন, “গণহত্যা মানে তো হাজার হাজার মানুষকে একসঙ্গে হত্যা করা। এখানে দু-চারজন মারা যেতেও পারে, তবে ঢালাওভাবে একে গণহত্যা বলা ভুল। কোথাও তো ৩০টা জিডি বা মামলা নেই।”

তখন ট্রাইব্যুনাল পক্ষ থেকে বলা হয়, ৩০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে। জবাবে আমির হোসেন বলেন, “এমন হলে তো অভিযোগ বা জিডি থাকার কথা, কিন্তু কোথাও কেউ অভিযোগ করেনি। এতিম শিশুদের আন্দোলনে নামিয়ে যারা এনেছিল, তাদের আমি ধিক্কার জানাই।”

ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন তোলে, “এজন্য কি শিশুদের মেরে ফেলতে হবে?” উত্তরে আইনজীবী বলেন, “আমি তো বলিনি যে তাদের মেরে ফেলা হয়েছে। মৃত্যুর তথ্য থাকলেও, তার প্রমাণ কোথায়?”

আলোচনার একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদন এবং মানবাধিকার সংগঠন অধিকার (Odhikar)-এর তথ্য তুলে ধরে বলেন, ৬১ জন নিহতের তথ্য রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আমির হোসেন বলেন, “তারা পত্রিকায় দিয়েছে, আমি অস্বীকার করছি না। তবে এটাকে বাইবেলের বাণী হিসেবে নিলে চলবে না। খতিয়ে দেখা দরকার, আসলেই কি এরা মারা গেছে, নাকি এটি রাজনৈতিক ব্যাখ্যার অংশ।”

তিনি যুক্তি দেন, যদি এতজন মারা গিয়ে থাকে, তবে এত বছরেও কেন কেউ জিডি বা মামলা করেনি, কেন কেউ সামনে এসে বলেনি, ‘আমার সন্তান মারা গেছে’।

ট্রাইব্যুনাল তখন প্রশ্ন রাখে, “এই ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কি না?” জবাবে আমির হোসেন প্রথমে জানান, মামলা হয়নি। তবে ট্রাইব্যুনাল পরে জানায় যে মামলা হয়েছিল।

এই বিতর্কিত বক্তব্য এবং প্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে দিয়ে ট্রাইব্যুনালের শুনানি চলতে থাকে। তবে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর বক্তব্যে একটি বার্তাই স্পষ্ট— শাপলা চত্বরে যা ঘটেছিল, তা আইনত বা সংজ্ঞাগতভাবে ‘গণহত্যা’ নয় বলেই তারা মনে করেন। আর হলেও, এর দায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর বর্তায় না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *