নির্বাচিত সরকার এলে পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেবে আইএমএফ: গভর্নর আহসান এইচ মনসুর

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ডিসেম্বর মাসে নির্ধারিত ৫৫০ কোটি ডলারের ঋণ প্যাকেজের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের আগে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করতে চায় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর (Ahsan H. Mansur)।

বুধবার (২২ অক্টোবর) ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণরত অবস্থায় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন গভর্নর। তিনি জানান, “আইএমএফ চায়, জাতীয় নির্বাচন শেষে গঠিত নতুন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই তারা পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিক। এখনো বাংলাদেশ এ বিষয়ে কোনো সম্মতি বা আপত্তি জানায়নি। তবে আমাদের কাছে এটি বড় কোনো সমস্যা নয়, কারণ বর্তমানে অর্থনৈতিক চাপ অনেকটাই সহনীয়।”

গভর্নর আরও বলেন, অর্থ ছাড়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আইএমএফের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া, যাকে বলা হয় রিভিউ। এই রিভিউয়ের মাধ্যমেই ঋণ শর্তাবলির প্রতিফলন, সংস্কার অগ্রগতি ও নীতিগত ধারাবাহিকতা যাচাই করে আইএমএফ। নির্বাচন সামনে থাকায় এখন পূর্ণাঙ্গ রিভিউ না করাই যৌক্তিক হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কারণ এই রিভিউয়ের সঙ্গে আইএমএফের আর্টিকেল-৪ মিশনও সংযুক্ত থাকে, যারা চাইছে নতুন সরকার গঠনের পর তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে চূড়ান্ত রিভিউ শেষ করতে।

গভর্নর জানান, “অক্টোবরেই আইএমএফের আর্টিকেল-৪ মিশন বাংলাদেশে আসবে। তারা এই প্যাকেজের আংশিক অগ্রগতি মূল্যায়ন করবে, কিন্তু চূড়ান্ত রিভিউ হবে না। চূড়ান্ত মূল্যায়ন ফেব্রুয়ারিতে বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থাপিত হবে, তখন নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে।”

এ পর্যন্ত বাংলাদেশ আইএমএফের প্রতিশ্রুত ৫৫০ কোটি ডলারের মধ্যে প্রায় ৩৬০ কোটি ডলার পেয়েছে। পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের সময় নির্ধারিত হয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে, আর ষষ্ঠ ও শেষ কিস্তির সম্ভাব্য সময় আগামী বছরের জুন।

প্রতিটি কিস্তি ছাড়ের আগে আইএমএফ থেকে একটি মূল্যায়ন মিশন আসে, যারা দুই সপ্তাহ ধরে সরকারের সংস্কারমূলক পদক্ষেপ ও বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে। এই ধারাবাহিকতায়, ২৯ অক্টোবর ঢাকায় আসছে আইএমএফের মূল্যায়ন দল, যারা পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের প্রাথমিক কাজ শুরু করবে।

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের মতে, আইএমএফের এই অবস্থান নতুন সরকারের প্রতি আস্থা তৈরিতে সহায়ক হতে পারে। একইসঙ্গে, এটি বর্তমান সরকারের চলমান অর্থনৈতিক নীতি ও সংস্কার কার্যক্রমে একধরনের তদারকির ভূমিকা রাখবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *