‘মন্ত্রী-এমপিরা কারাগারে থাকলে সেনা কর্মকর্তারা কেন নয়’: সাবজেল নিয়ে ক্ষোভ কর্নেল হাসিনুরের

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (International Crimes Tribunal)। তবে এসব কর্মকর্তাকে সেনানিবাসের মধ্যে ঘোষিত সাবজেলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গুমের শিকার সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান (Hasinur Rahman)।

তিনি সরাসরি বলেন, ‘মন্ত্রী-এমপিরা যদি দেশের নিয়মে কারাগারে থাকতে পারেন, তাহলে সেনা কর্মকর্তাদের জন্য কেন আলাদা ব্যবস্থা? বৈষম্য করে বিচার হয় না।’

বুধবার (২২ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন গুমের শিকার ব্যক্তিদের সংগঠন ইউনাইটেড ফর দ্য ভিকটিমস অব এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস (ইউভিইডি) (United for the Victims of Enforced Disappearances – UVED)-এর সদস্যরা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন হাসিনুর রহমানও।

তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাবজেল সৃষ্টি করেছেন, আমি এর বিপক্ষে। কোনো বৈষম্য চলবে না কারও সঙ্গে। আইজিপি, মন্ত্রী-এমপি এবং অন্য লোকেরা যদি দেশের নিয়ম-মাফিক কারাগারে থাকতে পারেন, এনাদের একই জায়গায় থাকতে হবে।’

সেনাবাহিনীর অভিযুক্ত সদস্যদের বিষয়ে মতামত জানাতে গিয়ে হাসিনুর বলেন, ‘সেনাবাহিনী অপরাধী না। বাহিনীর গুটিকয়েক অসৎ, বিপথগামী সদস্য শেখ হাসিনার প্ররোচণায় এই অপকর্মগুলো করেছেন। আমাদের এ বিষয়ে পরিষ্কার হতে হবে। শুধু শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) এবং আওয়ামী লীগের জন্য আজ সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য বিপথগামী হয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইনসাফ চাই। এই বিচার এই আয়নাঘর আছে, এটা প্রকাশ হয় ২০২২ সালে। কিন্তু (সেনাবাহিনীর) কেউ এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। কোনো জেনারেলও কথা বলেননি, উচিত ছিল।’

তবে বিচার প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানকে তিনি ধন্যবাদ জানাচ্ছেন এ বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য। আবার একইসঙ্গে সাবজেল ব্যবস্থার সমালোচনাও করেন, বলেন, ‘আমি তো মনে করি, আয়নাঘরে রেখে তাদের বিচার করা উচিত।’

আইসিটি এবং প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আমাদের তাজুল ভাই বা আইসিটি চরম ভালো কাজ করেছেন। এটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। যে সাহসী ভূমিকা… একটা সংশয় ছিল, সেটার এন্ড হইছে।’

তবে সাবজেলে রাখা হলে কোনো তথ্য মিলবে না বলেও আশঙ্কা করেন হাসিনুর রহমান। বলেন, ‘অনেকে বলতেছেন আমি শুনছি, এদের অনেকেই নিরপরাধ। কিন্তু তদন্তের সময় তাদের কেউ কথা বলেননি। এই অফিসারদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, কিন্তু কথা বলেনি। এখন যদি ক্যান্টনমেন্টে থাকে, একই কাজ করবে (নিশ্চুপ থাকবে)। আমি এর ঘোর-বিরোধী।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রয়োজন হলে গুমের ঘটনার পুনর্তদন্ত করতে হবে। কিন্তু সেটা এই কর্মকর্তাদের সাধারণ কারাগারে রেখেই হতে হবে। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে এসি রুমে রেখে, কাটা চামুচ-প্লেটে… এটা রাখা কোনোভাবেই সম্ভব না। বৈষম্য হলে আমরা ন্যায়বিচার পাবো না। দেশের যারাই এর সঙ্গে জড়িত, তাদের সবার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *