কোনো পদে না থেকেও তারেক রহমানের সাথে বৈঠকে ডাক পেয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর চমক

খুলনায় বিএনপির রাজনীতিতে দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসা নজরুল ইসলাম মঞ্জু (Nazrul Islam Manju) আবারও রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে। ৪৬ বছরের বিএনপি-রাজনীতির মধ্যে প্রায় ৩০ বছর তিনি নগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকও। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি থেকে নাম বাদ পড়ে তার। সেই সঙ্গে হারান বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ এবং বাদ পড়েন কেন্দ্রীয় কমিটি থেকেও। এরপর নগর বিএনপির প্রায় সব ইউনিট কমিটি থেকেও একে একে বাদ দেওয়া হয় তার অনুসারীদের।

তবুও দমে যাননি মঞ্জু। পদবিহীন অবস্থায়ও অব্যাহত রাখেন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি তিনি নিজের অনুসারীদের নিয়ে আলাদা করে পালন করেন। চার বছর পর এই ধারাবাহিক পরিশ্রম ও উপস্থিতির ফলও মিলেছে। কোনো পদে না থেকেও আজ সোমবার গুলশানে তারেক রহমান (Tarique Rahman)-এর সঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বৈঠকে অংশ নিতে ডাকা হয়েছে তাকে। এই সংবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরগরম হয়ে উঠেছে খুলনার রাজনৈতিক অঙ্গন—বিশেষ করে মঞ্জু-অনুসারীরা উৎসাহে ভরপুর।

১৯৭৯ সালে ছাত্রদল থেকে রাজনীতির যাত্রা শুরু করেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ১৯৮৭ সালে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ১৯৯২ সাল থেকে পরবর্তী ১৭ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ১২ বছর সভাপতির পদে ছিলেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিজয় লাভ করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দীর্ঘ চার দশক খুলনা বিএনপির সঙ্গে তার নাম প্রায় সমার্থক হয়ে ওঠে।

তবে এ সময় তার বিরুদ্ধে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং নিজের ঘনিষ্ঠদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার অভিযোগও উঠে দলের অভ্যন্তর থেকে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরেই আসে সেই রাজনৈতিক ছন্দপতন। ৯ ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে ঘোষিত তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিতে মঞ্জু ও তার অনুসারীদের নাম না থাকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি। ১২ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে দলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানালে ১৪ ডিসেম্বর শোকজ করা হয় তাকে, এবং ২৫ ডিসেম্বর অব্যাহতি দেওয়া হয় বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেও।

এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে মঞ্জুর অনুসারীরা শুরু করেন গণপদত্যাগ। কিছুদিনের জন্য রাজনীতিতে নীরবতা বজায় রাখলেও খুব শিগগিরই আবার সক্রিয় হয়ে ওঠেন তারা। খুলনা মহানগর বিএনপি, পাঁচ থানা ও ৩১টি ওয়ার্ড কমিটির পুনর্গঠনে মঞ্জু-পন্থীরা বঞ্চিত হলেও, কিছুদিন পর থেকেই বড় বড় কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে পৃথক ব্যানার নিয়ে অংশ নিতে থাকেন। জাতীয় দিবসগুলিতেও তারা আয়োজন করেন বড় আকারের কর্মসূচি।

খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন, “মানুষ চায় তার (মঞ্জু) মতো অভিজ্ঞ, দক্ষ ও বিশ্বস্ত সংগঠক দলকে নেতৃত্ব দিক। তিনি জনগণের আস্থাভাজন প্রতিনিধি হতে পারেন জাতীয় সংসদেও।”

নিজ অবস্থান পরিষ্কার করে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, “আমি কখনোই দলের বাইরে যাইনি। এক দিনের জন্যও বিএনপির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি। খুলনার প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতাকর্মীরা নিজেদের অর্থ ব্যয় করে আমার সঙ্গে থেকেছে। মামলা-হামলার শিকার হয়েছে, তবু দলের জন্য কাজ করেছে। কোনো পদ ছাড়াই তাদের এই ত্যাগই প্রমাণ করে, তারা প্রকৃত বিএনপি কর্মী।”

তিনি আরও বলেন, “ঢাকায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বৈঠকে আমাকে ডাকার পর খুলনা বিএনপিতে নতুন আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। মনে হচ্ছে দলে প্রাণ ফিরে এসেছে। আমি সব সময় দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *