রয়টার্স’র সাথে সাক্ষাৎকারে যা বললেন পলাতক শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে না দিলে দলটির লাখ লাখ সমর্থক নির্বাচন বয়কট করবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)। নয়াদিল্লিতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনা বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স (Reuters)-কে পাঠানো এক ইমেইল সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।

তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে যে সরকার নির্বাচিত হবে, তার শাসনামলে তিনি দেশে ফিরবেন না এবং ভারতে অবস্থান করবেন। ২০২৪ সালের অগাস্টে ছাত্রনেতৃত্বে হওয়া এক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের সময় তিনি দেশ ত্যাগ করেন। তার অনুপস্থিতিতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)-এর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার করেছে।

শেখ হাসিনার দাবি, “আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা শুধু অন্যায্যই নয়, বরং আত্মঘাতী।” তিনি আরও বলেন, “পরবর্তী সরকারের অবশ্যই নির্বাচনী বৈধতা থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের লাখ লাখ সমর্থক এমন পরিস্থিতিতে ভোটে অংশ নেবে না। কার্যকর রাজনৈতিক ব্যবস্থা চাইলে কোটি মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া যায় না।”

১৫ বছর টানা ক্ষমতায় থাকার পর, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই প্রথম আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে মুখ খুললেন শেখ হাসিনা।

নির্বাচনে অংশগ্রহণের আশাবাদ

বাংলাদেশে বর্তমানে ১২ কোটি ৬০ লাখের বেশি ভোটার। বহুদিন ধরেই রাজনীতিতে আধিপত্য ধরে রেখেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশন গত মে মাসে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে, এবং এরও আগে ইউনূসের সরকার দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগের ভোটারদের অন্য দলকে ভোট দিতে বলছি না। আমরা এখনো আশা করি, শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং আমরা নিজেরাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবো।” তবে তিনি বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গোপনে কোনো আলোচনা করছেন কিনা, সে বিষয়ে কিছু জানাননি। ইউনূস সরকারের পক্ষ থেকেও তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।

অভিযোগ, বিচার ও অতীত ইতিহাস

২০২৪ সালের সেই অভ্যুত্থানের সময় দেশে যে ভয়াবহ সহিংসতা হয়েছিলো, তা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সহিংসতায় অন্তত ১,৪০০ জন নিহত হন এবং কয়েক হাজার আহত হন, যাদের অধিকাংশই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান।

এসময় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়ের করা হয় এবং বর্তমানে তার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে। তবে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “এই কার্যক্রমগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নাটক। এগুলো ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে আনা হয়েছে, যেখানে দোষী সাব্যস্ত করে রায় আগেই ঠিক করা। আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের ন্যূনতম সুযোগও দেয়া হয়নি।”

ফেরার পরিকল্পনা নেই, নেতৃত্ব প্রসঙ্গে মন্তব্য

শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তিনি দেশে ফেরার পরিকল্পনায় নেই। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে সরকারের হোক বা বিরোধী দলের ভূমিকায় ফিরে আসবে—এমন আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন।

দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে তিনি বলেন, “এটা আসলে আমার বা আমার পরিবারের বিষয় নয়। আমাদের যা প্রয়োজন তা হলো সাংবিধানিক শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। কোনো ব্যক্তি বা পরিবার দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না।”

তার ছেলে ও উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এর আগে রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন, দলের সিদ্ধান্ত হলে তিনি নেতৃত্ব বিবেচনা করতে পারেন।

শেখ হাসিনা স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে তার বাবা ও তিন ভাই নিহত হয়েছিলেন। দিল্লিতে এখন তিনি স্বাধীনভাবে বাস করলেও তার পরিবারিক সহিংস ইতিহাসের কারণে সতর্ক থাকেন। রয়টার্সের তথ্যমতে, কিছুদিন আগে তাকে লোধি গার্ডেনে হাঁটতে দেখা গেছে, সঙ্গে ছিলেন দুজন ব্যক্তি—সম্ভবত নিরাপত্তারক্ষী। পথচারীরা চিনে ফেললে তিনি হালকা মাথা নেড়ে সাড়া দিচ্ছিলেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *