“জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে কী হলো না হলো, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়—বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ৩১ দফা বাস্তবায়ন হবেই”—সরাসরি এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (Amir Khasru Mahmud Chowdhury)। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশের সংবিধান ও সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ বক্তব্য দেন।
৩১ দফা বাস্তবায়নে বিএনপি অটল
কারও নাম না উল্লেখ করলেও বক্তব্যে ইঙ্গিত স্পষ্ট ছিল, বিএনপি ৩১ দফার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবে না। তিনি বলেন, “৩১ দফার মধ্যে সংস্কারের একটা পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা রয়েছে। তারা (অন্যরা) সংস্কার করুক, না-ই করুক—আমরা যারা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম, তারা সবাই মিলে এই ৩১ দফা বাস্তবায়ন করব। ঐকমত্য কমিশন কী বলল, সেটা নিয়ে আমাদের কিছু আসে যায় না।”
“ঢাকা শহরে বসে দাবি মানাতে পারবেন না”—জামায়াতকে কড়া বার্তা
নিজ বক্তব্যে আমীর খসরু সরাসরি জামায়াত-কে না বললেও স্পষ্ট ইঙ্গিত দেন, “অন্য কেউ যদি কিছু চায়, তারা সেটা জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারে। ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে যান, সেখানেই পরিবর্তন আনুন। কিন্তু আপনি জোর করে রাজধানীতে বসে আপনার দাবি মানাতে বলবেন, আবার ঐকমত্য কমিশন কিংবা সরকারের আশীর্বাদ নিতে চাইবেন—এটা তো বাংলাদেশের জন্য লড়াই করা মানুষের চাওয়া নয়।”
এর আগে আজ জামায়াতসহ আন্দোলনরত আটটি দল ড. ইউনূস (Dr. Yunus)-এর কাছে স্মারকলিপি দিয়ে তাদের পাঁচ দফা দাবির বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও নভেম্বরে গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ১১ নভেম্বরের আগে দাবি না মানা হলে “ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে”।
গণভোট ‘অসাংবিধানিক’, বিএনপির উদারতা ভুল ছিল
গণভোট নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে আমীর খসরু বলেন, “এই সংবিধানে গণভোটের কোনো প্রভিশন নেই—একদম পরিষ্কার। গণভোট করতে চাইলে আগে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে, আর তা সংসদের মাধ্যমেই সম্ভব। যেহেতু সংসদ জনগণের প্রতিনিধি, তাই সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার তাদের।”
এখানেই থেমে থাকেননি, নিজের দলের অবস্থানের সমালোচনাও করেন তিনি। বলেন, “বিএনপি দেশের রাজনৈতিক সৌহার্দ্য ও সহনশীলতার জায়গা থেকে নির্বাচনের দিন গণভোটের পক্ষে মত দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেই সিদ্ধান্ত সাংবিধানিকভাবে ঠিক হয়নি, নৈতিকভাবেও না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিক থেকেও তা সঠিক ছিল না। এই উদারতা দেখানো ঠিক হয়নি, যার খেসারত আজ দিচ্ছি।”
সভায় উপস্থিত ছিলেন সংবিধান প্রণেতা কামাল হোসেনের প্রতিনিধি
আলোচনা সভার আয়োজন করে গণফোরাম। এতে সভাপতিত্ব করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। সংবিধান প্রণেতা ও ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন অসুস্থ থাকায় তার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মিজানুর রহমান।
সভায় আরও বক্তব্য দেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নারী পক্ষের সভাপতি শিরীন হকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।


