সমালোচনার ঝড়ে মীর স্নিগ্ধ: “কেউ কেউ বলছেন, আমি ভাইয়ের রক্ত বেচে খাচ্ছি”

বিএনপি’র রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ (Mir Mahbubur Rahman Snigdha) — জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত মীর মুগ্ধর ভাই। তবে এই সমালোচনাকে ক্ষোভ নয়, বরং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন তিনি।

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক আবেগঘন পোস্টে মীর স্নিগ্ধ লিখেছেন, “গত কয়েকদিন ধরে আপনাদের সব কমেন্ট পড়েছি। বিশ্বাস করুন, একটাও বাদ দেইনি। কেউ প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসা দিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন। আবার অনেকে রাগ করেছেন, লিখেছেন আমি ‘ভাইয়ের রক্ত বেচে খাচ্ছি’, কেউ বলছেন ‘অযোগ্য’, কেউ বলছেন ‘ক্ষমতার লোভী’। কিন্তু সত্যি বলছি, একটুও রাগ হয়নি। বরং মনে হয়েছে—এই রাগের ভেতরেই আপনাদের ভালোবাসা আছে। কারণ, আপনারা তাকেই বকেন যাকে নিজের মনে করেন।”

তিনি আরও বলেন, “আপনারা মুগ্ধকে ভালোবাসেন, তাই আমাকে নিয়ে আপনাদের এত ভয়, এত চিন্তা। আমি যদি পথভ্রষ্ট হই, সেই ভয়েই আপনারা বকা দেন। আমি এটাকেই ভালোবাসা হিসেবে দেখি।”

নিজ জীবনের হঠাৎ পরিবর্তনের কথা জানাতে গিয়ে স্নিগ্ধ লিখেছেন, “আমি তো রাজনীতিবিদ হয়ে জন্মাইনি। কয়েক মাস আগেও আপনাদের মতোই একজন সাধারণ মানুষ ছিলাম। পড়াশোনা শেষ করে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন ছিল, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম। কিন্তু জুলাইয়ের সেই দিনটা… সেই একটি গুলি আমাদের পরিবারের সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে।”

ভাইয়ের মৃত্যুর বেদনা ব্যক্ত করে তিনি লিখেছেন, “যখন কেউ বলে আমি ভাইয়ের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে রাজনীতি করছি, তখন বুকের ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে। মনে হয়, এর চেয়ে ওই গুলিটা আমাকেই যদি লাগত, হয়তো ভালো হতো।”

রাজনীতিতে আসার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মীর স্নিগ্ধ বলেন, “আমি রাজনীতিতে এসেছি শখ থেকে নয়। শত শত আহত ভাইয়ের আর্তনাদ শুনে বুঝেছি, শুধু কান্না দিয়ে বিচার পাওয়া যায় না। বিচার পেতে হলে এই সিস্টেম বদলাতে হবে, তাই সেই জায়গায় যেতে চেয়েছি, যেখানে আইন তৈরি হয়।”

নিজের সীমাবদ্ধতার কথাও অকপটে স্বীকার করেন তিনি—“আমি অভিজ্ঞ নই, রাজনীতিবিদদের মতো মিথ্যা বলতে পারি না। ভুল করব, হোঁচট খাব, কিন্তু প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি—ভুল হলে আপনারা শাসন করবেন, গালি দেবেন, কান ধরে সঠিক পথে আনবেন। আপনাদের এই অভিমানই আমাকে মনে করিয়ে দেয়—আমার পিছু হটার সুযোগ নেই।”

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন (July Shaheed Smriti Foundation)-এর সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর স্নিগ্ধ আরও লিখেছেন, “যারা আমাকে ভালোবাসছেন আর যারা এখন ঘৃণা করছেন—আপনারা আসলে একই জিনিস চান। সবাই চান, মুগ্ধর আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়। আমিও ঠিক সেটাই চাই।”

তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আসুন না, আমার প্রতি অভিমানের এনার্জিটাকেই দেশ গড়ার কাজে লাগাই। আমি আপনাদের নেতা হতে আসিনি, আমি এসেছি হারিয়ে ফেলা ভাই-বোনদের অসমাপ্ত যাত্রার যাত্রী হতে—যে যাত্রায় আমরা সবাই একসঙ্গে। আমি থাকব—সব গালি, সব অপমান সহ্য করে। কারণ আমি হেরে গেলে, আপনি হেরে গেলে, আমরা হেরে গেলে—হেরে যাবে মুগ্ধ, হেরে যাবে জুলাই।”

পোস্টের শেষে মীর স্নিগ্ধ লেখেন, “একবার বিশ্বাস করে পাশে দাঁড়ান। দেখবেন, আমরা একসঙ্গে পারব।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *