জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপি (National Citizens’ Party)-র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী (Nasiruddin Patwari) একটি ইঙ্গিতপূর্ণ স্ট্যাটাস দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনা সৃষ্টি করেছেন। সোমবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে তিনি স্পষ্টভাবে নাম না করলেও তাঁর ভাষ্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে ধরে নেওয়া হচ্ছে, এই স্ট্যাটাস আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া (Asif Mahmud Sojib)-কে লক্ষ্য করেই দেওয়া হয়েছে।
পাটোয়ারীর স্ট্যাটাসে লেখা হয়— “বন্ধু, তোমার লাল টুকটুকে স্বপ্ন আর পতাকা একটা সিটের বিনিময়ে বিক্রি করে দিও না।” এই একটি বাক্যেই যেন উঠে এসেছে রাজনৈতিক মূল্যবোধ বনাম বাস্তবতার সংঘর্ষ।
এই স্ট্যাটাসের প্রতিক্রিয়ায় আরও আলোচনা ছড়ায়, যখন এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ স্ট্যাটাসটির একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বিস্তারিত বিশ্লেষণ দেন।
তিনি লিখেছেন, “এই পোস্টটা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভাইকে নিয়েই করা—এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটা একজন বিপ্লবীকে তার সংগ্রাম ও গন্তব্য মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য সবচেয়ে অর্থবহ ম্যাসেজ।”
আসাদুল্লাহ আরও দাবি করেন, আসিফ মাহমুদের সাম্প্রতিক দুটি কর্মকাণ্ড এই ইঙ্গিতের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে:
১. এনসিপিতে নিজের অবস্থান জোরালো করতে তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটি পুনরায় সক্রিয় করেছেন।
২. এমন একটি আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, যেখানে বিএনপি (BNP) এখনো প্রার্থী দেয়নি।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিএনপির সঙ্গে আসিফ ভাইয়ের সমঝোতার প্রসেস এখনো চলমান। হয়তো তিনি একটি আসন, হয়তো একটি মন্ত্রণালয়ের বিনিময়ে সমঝোতায় যেতে পারেন। কিন্তু সেটা আসিফ মাহমুদের জন্য এবং দেশের জন্য হবে ক্ষতিকর।”
আসাদুল্লাহ তার দীর্ঘ পোস্টে আসিফ মাহমুদের রাজনৈতিক ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, “লংমার্চের ঘোষক হিসেবে, স্বৈরাচারবিরোধী লড়াইয়ে পরীক্ষিত যোদ্ধা তিনি। ছাত্রলীগের হাতে মার খেয়েও আপোষ করেননি। তার মতো আপোষহীন মনোভাবের মানুষের পক্ষে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কঠিন।”
তিনি আরও যোগ করেন, “বিএনপি যখন চাপমুক্ত হয়ে যাবে, তখন আসিফ মাহমুদকে ছুঁড়ে ফেলতেও দেরি করবে না। একবার লোনা জলে অভ্যস্ত হয়ে গেলে মিঠা জলে ফেরা কঠিন। এই সমঝোতা হবে তার রাজনৈতিক মৃত্যু।”
সবশেষে সরাসরি বার্তা দিয়ে বলেন, “আসিফ ভাই, আপনার লাল টুকটুকে স্বপ্ন বেঁইচেন না।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, গত রোববার ঢাকার-১০ আসনের ধানমন্ডি এলাকায় ভোটার হওয়ার আবেদন করেছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি এই আসন থেকেই নির্বাচন করতে চান। বিএনপি এখনও পর্যন্ত এ আসনে কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। এর আগে আলোচনা ছিল, আসিফ কুমিল্লা-৩ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। তবে সেই আসনে বিএনপি এরই মধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে—জনপ্রিয় নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ।
এমন প্রেক্ষাপটে পাটোয়ারীর স্ট্যাটাস এবং যুবনেতার ব্যাখ্যা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে—আসিফ মাহমুদ কি আদর্শ থেকে সরে যাচ্ছেন, নাকি কৌশলের রাজনীতি করছেন?


